নিজস্ব প্রতিবেদক : যমুনা নদীর উপর পৃথক রেলসেতু নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগসহ ১১টি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর বিস্তারিত নকশা, দরপত্র সহায়তা ও সুপারভিশন কাজের পরামর্শক হিসেবে জাপানি প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল গ্লোবাল কনসালট্যান্টস লিমিটেডকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৭৯৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এ রেলসেতু নির্মাণে অর্থায়ন করছে জাপানি দাতা সংস্থা জাইকা।
তিনি জানান, এছাড়া বৈঠকে অন্যান্য যেসব প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে একটি নতুন প্রোডাক্ট অয়েল বা কেমিক্যাল, ক্রুড অয়েল ট্যাংকার ক্রয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮৬ কোটি টাকা। নারায়ণগঞ্জে নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ওয়ার্কস লিমিটেড থেকে এটি কেনা হবে।
অতিরিক্ত সচিব জানান, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১৫ লাখ গ্রাহক সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ২৩ হাজার ৮৯৩টি ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমার কেনার একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি সরবরাহ করবে মেসার্স টিএস ট্রান্সফরমার্স লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ১৮০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
একই প্রকল্পের আওতায় ৬৯ হাজার ৩৮০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি (এসপিসি পোল) কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। মেসার্স চরকা এসপিসি পোল লিমিটেড এগুলো সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ১১৯ কোটি ১২ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, সরকারের রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে বিদৎ-জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০-এর আওতায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য বাপেক্সের বিশেষ উদ্যোগের ১০টি প্রকল্পের আওতায় দুটি প্রকল্পের কেনাকাটার জন্য বৈঠকে তিনটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে একটি প্রকল্পের আওতায় ৬০০-৬৫০ হর্সপাওয়ারের মেকানিক্যাল ওয়ার্ক-ওভার রিগ ও রিগের সহায়ক যন্ত্রপাতি কেনা হবে। চীনের মেসার্স এসজে পেট্রোলিয়াম মেশিনারিজ কোম্পানি এগুলো সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ৭১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
অপর দুটি হচ্ছে রূপকল্প-৪ প্রকল্পের আওতায় শাহবাজপুর-১ ও ২ ওয়ার্ক-ওভার কাজসংশ্লিষ্ট মালামাল ক্রয় এবং ‘রূপকল্প-৪’ প্রকল্পের আওতাধীন ভোলা জেলায় অবস্থিত নর্থ-১ ও শাহবাজপুর ইস্ট-১-এ দুটি অনুসন্ধান কূপ খননের জন্য পূর্ত নির্মাণকাজ।
অতিরিক্ত সচিব জানান, এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ১১টি প্যাকেজের ব্যয় কমা/বাড়ার (ভেরিয়েশন) প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের দাউদকান্দি-চট্টগ্রাম অংশের সড়ক ও সেতুর কাজের কোনো প্যাকেজে ব্যয় বেড়েছে, কোনো প্যাকেজে কমেছে।
দেখা যায়, ছয়টি প্যাকেজে ২২৫ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে। অপরদিকে পাঁচটি প্যাকেজে ৪১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় কমেছে। অর্থাৎ সার্বিকভাবে ব্যয় বেড়েছে ১৮৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেজা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের প্যাকেজ-১-এর ব্যয় ৭৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা ও প্যাকেজ-৭-এ ৪৫ কোটি তিন লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে।
সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের প্যাকেজ-৪-এ ১০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, প্যাকেজ-৯-এ তিন কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে।
টিবিএল-এসিএলের প্যাকেজ-১০-এ ৬৩ কোটি টাকা এবং গ্যানন ডানকার্লে অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের প্যাকেজ-বি-২-এ ২৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে।
অপরদিকে সিনোহাইড্রোর প্যাকেজ-২-এ ছয় কোটি ১৯ লাখ টাকা, প্যাকেজ-৩-এ সাত কোটি ৬৮ লাখ টাকা ও প্যাকেজ-৫-এ ১০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, প্যাকেজ-৬-এ ১২ কোটি ৪২ লাখ টাকা, প্যাকেজ-৮-এ ৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় কমেছে।
অতিরিক্ত সচিব জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে জিসিবি এলাকায় খালি কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বেড়ে যাওয়ায় নিযুক্ত ঠিকাদার মেসার্স এভারেস্ট এন্টারপ্রাইজের অতিরিক্ত ব্যয়ের জন্য একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। আট কোটি ৭১ লাখ টাকা বেড়ে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৫৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
তিনি জানান, এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে জিসিবি এলাকায় বার্থ অপারেটরের সঙ্গে চুক্তিমূল্যও বেড়েছে। বৃদ্ধির পর চুক্তিমূল্য হবে ৯৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা; শুরুতে ব্যয় ছিল ৮৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
অর্থনৈতিক মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঁচ প্রস্তাব অনুমোদন
প্রকল্প বাস্তবায়নে গতিশীলতা আনতে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে কাঠামোগত এবং পদ্ধতিগত পরিবর্তনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে একটি নীতিমালা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব।
এছাড়া গভীর সমুদ্রের ১২ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে দক্ষিণ কোরিয়ার পোসকো দাইয়ু করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের একটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পটি পিপিপির আওতায় বাস্তবায়নের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
চীনের অর্থায়নে চায়নিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনের সংযোগকারী অবকাঠামো নির্মাণ এবং উপযোগ সেবা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি।
এছাড়া চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ডেভেলপার পাওয়ারপ্যাক-ইস্টওয়েস্ট-গ্যাসমিন কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে সম্পাদিতব্য চুক্তিনামায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে সভায়।