নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গবন্ধু সেতুতে চাপ কমানো ও ট্রেন চলাচল সক্ষমতা বাড়াতে যমুনা নদীতে নির্মাণ করা হবে পৃথক রেল সেতু। নকশা প্রণয়নসহ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে এটি নির্মাণ করবে রেলওয়ে। দেশের বৃহত্তম এ রেল সেতু নির্মাণ-সংক্রান্ত প্রস্তাবনা আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ওঠার কথা রয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবনার (ডিপিপি) তথ্যমতে, বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে উজানে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন রেল সেতুটি নির্মাণ করা হবে। এজন্য পৃথক নদী শাসন করতে হবে না। জমি অধিগ্রহণও খুব বেশি দরকার হবে না। এতে ব্যয় অনেক কম হবে।
যমুনা রেল সেতুর উভয় দিকে ভায়াডাক্ট থাকবে ৫৮০ মিটার। যমুনা ইকোপার্কের পাশ দিয়ে এটি বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম অংশের রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হবে। এজন্য ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করতে হবে। পাশাপাশি তিনটি স্টেশন বিল্ডিং, তিনটি প্ল্যাটফর্ম ও শেড, তিনটি লেভেল ক্রসিং গেট ও ছয়টি কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। আর সেতুর পূর্ব পাশে লুপ লাইনসহ প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রেলপথ, ১৩টি কালভার্ট ও দুটি সংযোগ স্টেশন নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া ছয় একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পারাপারের সময় গতি অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়। আর ব্রড গেজ ট্রেনে পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধই রয়েছে। এটি দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক। এজন্য পৃথক রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেতুটি নির্মাণে জাইকার সাত হাজার ৭২৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
রেলওয়ের তথ্যমতে, চূড়ান্ত অনুমোদনের পর যমুনায় রেল সেতু নির্মাণে বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু করা হবে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এর পর ঠিকাদার নিয়োগ ও মূল সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হবে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। রেলপথের পাশাপাশি এতে গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। স্টিল অবকাঠামোয় প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে সেতুটি নির্মাণে।
নির্মিতব্য সেতু দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। এছাড়া কনটেইনারবাহী ট্রেন চলবে ৮০ কিলোমিটার গতিতে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার গতিতে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। আর পণ্যবাহী ও কনটেইনারবাহী ট্রেন চলাচল নিষিদ্ধ। গতি বাড়ায় নতুন সেতু দিয়ে দৈনিক ৬০ শতাংশ যাত্রীবাহী চলাচল বাড়ানো যাবে। আর পণ্য পরিবহন বাড়ানো যাবে ১৬০ শতাংশ। ফলে দৈনিক মালবাহী ট্রেনে সাড়ে ৩২ টন মালামাল পরিবহন করা যাবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে জুনে উদ্বোধনের পর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন চলাচল করছে। তবে ছয় বছরের মাথায় সেতুটিতে ফাটল দেখা দিলে ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে সেতুতে ট্রেনে পারাপার হতে কমপক্ষে ৪৫ মিনিট লাগে। ফাটলের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকায় পৃথক রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে রেল সেতুটি নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই করে কানাডীয় ক্যানারেল কোম্পানি লিমিটেড।
Add Comment