Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 1:07 am

যশোরাঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে সরষে আবাদ

মীর কামরুজ্জামান, যশোর: সরষের হলুদ ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে যশোরের দিগন্তজোড়া মাঠ। জেলার বিস্তীর্ণ মাঠগুলোয় এবার ব্যাপকহারে সরষে চাষ হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই মনে হচ্ছে সরষে ফুলের হলুদ আচ্ছাদনে ঢেকে আছে চারদিক। চলতি মৌসুমে যশোরাঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে সরষের আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া সরষে চাষের উপযোগী থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, নিকট অতীতের যে কোনো সময় অপেক্ষা চলতি মৌসুমে যশোরাঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণ রবি ফসলের আবাদ হয়েছে। এসব ফসলের সিংহভাগই জুড়ে আছে সরষে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোরাঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে যশোরাঞ্চলের আওতাভুক্ত ছয় জেলা যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চূয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরষে আবাদ হয়েছে। এই ছয় জেলায় ৫৪ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে সরষে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ৭২ হাজার ৯২৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে যশোরে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে সরষে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সেটি প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে চাষ হয়েছে ২৪ হাজার ৮৪৮ হেক্টর জমিতে। এর বাইরে ঝিনাইদহে ৯ হাজার ৭৭৭ হেক্টরের বিপরীতে চাষ হয়েছে ১১ হাজার ১১২ হেক্টর,  মাগুরায় ১৫ হাজার হেক্টরের বিপরীতে ১৬ হাজার ৩৫৫ হেক্টর, কুষ্টিয়ায় ৯ হাজার ১৫০ হেক্টরের বিপরীতে ১১ হাজার ৬৪৫ হেক্টর, চুয়াডাঙ্গায় দুই হাজার ৮০০ হেক্টরের বিপরীতে তিন হাজার ১৩৫ হেক্টর ও মেহেরপুর জেলায় চার হাজার ৩৭০ হেক্টরের বিপরীতে পাঁচ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে সরষে আবাদ হয়েছে।

কৃষি বিভাগ বলছে, অন্যান্য বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম সরষে আবাদ হলেও এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে বেশি সরষে আবাদ হয়েছে। সরষে আবাদের জন্য আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় কৃষকরাও বেশ আশান্বিত।

যশোর সদর উপজেলার সুলতানপুর মাঠে কথা হয় চাষি আসাদুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার তাদের মাঠে ১৭০ বিঘা জমিতে সরষে আবাদ হয়েছে। এসব ক্ষেতে টরি-৭ ও টরি-১৪ নামের উন্নত জাতের সরষের দুটি জাত আবাদ হয়েছে। তিনি বলেন, এ বছর সরষে চাষের জন্য আবহাওয়া শতভাগ অনুকূলে। সরষে বপনের সময় প্রয়োজনীয় বৃষ্টি পাওয়ায় কোনো সমস্যা হয়নি। শেষমেষ ফুল ও ফল আসা পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না

হওয়ায় এ বছর নিকট অতীত যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো ফলন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

একই মাঠে কথা হয় চাষি মাহফুজ বিল্লাহ ও রুবায়েত হোসেনের সঙ্গে। তারা বলেন, এ বছর সয়াবিনসহ যাবতীয় ভোজ্যতেলের দাম দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ায় অধিকাংশ কৃষক সরষে আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন। ধান চাষে কখনও লাভ কখনও লোকসান হওয়ায় কৃষকরা চাষের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এমন সময় সরষে আবাদ করে লাভ করবেন বলে আশা করছেন তারা। কৃষক মাহফুজ বিল্লাহ ও রুবায়েত হোসেন বলেন, ধানসহ অন্য ফসলে খরচ বেশি, লাভ কম। অথচ সরষে চাষে খরচ কম লাভ বেশি। এক বিঘা জমিতে বীজ, সার, সেচ ও মাড়াই করে বাজারে তোলা পর্যন্ত খরচ হয় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে সরষের ফলন হয় চার-পাঁচ মণ। প্রতিমণ সরষে বাজারে পাঁচ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অলিয়ার রহমান নামে আরেক কৃষক বলেন, সরষে আবাদের পাশাপাশি একই মৌসুমে কৃষক আমন ও বোরো আবাদ করে বাড়তি মুনাফা পাচ্ছেন। সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে বিভিন্ন সবজির আবাদ করেও তারা লাভবান হচ্ছেন। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় অনেক চাষিই এখন ধান আবাদের পাশাপাশি সরষে আবাদ করে দ্বিগুণ লাভ করছেন।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, চলতি মৌসুমে যশোরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ হাজার ৮৪৮ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ বেশি হয়েছে, যা কৃষির জন্য খুবই ইতিবাচক। তিনি বলেন, জমির উর্বরতা ধরে রাখার জন্য শস্য নিবিড়তার জন্য কৃষককে সরষে আবাদে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কারণ সরষে আবাদ করে একই জমিতে সহজেই তিন ফসলের চাষ করা সম্ভব। এজন্য অধিকাংশ কৃষককে সরষে আবাদের জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোরাঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, সরকার ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমাতে রবি ফসলের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এজন্য যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় অন্য ফসলের সঙ্গে সরষে আবাদকারী চাষির সংখ্যা বাড়ছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরষের ভালো ফলন হবে বলে তিনি আশা করেন।