প্রতিনিধি, যশোর: দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে আগামী দিনে আরও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিগত দিনেও দেশের উন্নয়ন করেছি, আপনারা সুযোগ দিলে আগামী দিনেও উন্নয়ন করব। কাজেই ওয়াদা দিন, আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করবেন। গতকাল বিকালে যশোর শহরের শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সব মানুষকে বলে দিয়েছি, কোনো জমি যাতে খালি রাখা না হয়। পারলে একটা মরিচ গাছ লাগান, একটি টমেটো গাছ লাগান। এটি আমাদের সবার উপকারে আসবে।
যশোর-খুলনা অঞ্চলের দুঃখ ভবদহের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই অঞ্চলের কিছু স্থান এখনও জলাবদ্ধ রয়েছে। আমরা কপোতাক্ষ খননের মাধ্যমে প্রায় ৮২ কিলোমিটার নাব্যতার জন্য প্রকল্প নিয়েছি, যাতে এ নদে নৌকা চলাচল করতে পারে। ভবদহ অঞ্চলের নদীগুলো ড্রেজিং করার লক্ষ্যে দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এতে এ অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যশোরে জনসভা করতে পেরে আমি আনন্দিত। যশোরে আমার নাড়ির টান রয়েছে। এখানকার মাটিতে শুয়ে আছেন আমার নানা শেখ জহুরুল হক। তিনি যশোরে চাকরি করতেন। আমার মায়ের বয়স যখন তিন বছর ছিল, তখন তিনি মারা যান। ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই খারাপ ছিল, এর কারণে এখানে আসা যায়নি। তাই আমার নানাকে এখানে দাফন করা হয়েছে। এখানে আমার নানার স্মরণে আইটি পার্ক করা হবে।
রিজার্ভ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারই রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়েছে। আর কোনো সরকার রিজার্ভ বাড়াতে পারেনি। বাংলাদেশে রিজার্ভের কোনো সমস্যা নেই। সব ব্যাংকেই আমাদের পর্যাপ্ত টাকা রয়েছে। আগামী দিনেও কোনো সমস্যা হবে না।
যারা রিজার্ভ নিয়ে সমালোচনা করে তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানা ধরনের সমালোচনা শুনছি। অনেকের প্রশ্নÑরিজার্ভ গেল কই? রিজার্ভ কোথাও যায়নি। মানুষের কাজে লেগেছে। যেহেতু যুদ্ধ লেগেছে, সবকিছুর দাম বেড়েছে। তারপরও আমরা খরচ করছি, আমদানি করছি; যাতে দেশের মানুষের খাদ্যে ঘাটতি না হয়। কাউকে যেন সমস্যায় পড়তে না হয়। আমরা তো রিজার্ভের অপচয় করিনি। মানুষের কল্যাণে কাজেলাগিয়েছি। খাদ্যশস্য কিনেছি, জ্বালানি তেল কিনতে হয়েছে, বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। করোনা টিকা এবং চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছি। এসব কাজে রিজার্ভ থেকে খরচ করতে হয়েছে। মানুষের কথা চিন্তা করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছি আমরা।
যশোর শামস-উল হুদা স্টেডিয়াম সংস্কার করা হবেÑউল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যশোরের এ স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই স্টেডিয়াম এখন জরাজীর্ণ। এ স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এটিকে ১১ স্তরবিশিষ্ট আধুনিক স্টেডিয়াম করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী যুবসমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, তোমাদের খেলাধুলা করতে হবে, পড়াশোনা করতে হবে, সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ থেকে দূরে থাকতে হবে। আমরা শান্তি চাই, দেশের উন্নতি চাই, সবাই মিলে কাজ করলে অবশ্যই আমরা দেশের উন্নয়ন করতে পারব।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑআওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ প্রমুখ।