মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: যশোরে এক সময় শুধু শীতকালে সবজি চাষ হলেও এখন বছরজুড়ে চলে আগাম সবজির চাষ। শীত কিংবা গ্রীষ্ম সারা বছর যশোরে ক্ষেতজুড়ে নানা জাতের সবজি ভরপুর থাকে। বিশেষ করে শীতের আগমনের আগে আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষ করে জেলার কৃষকরা বাড়তি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর যশোরের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে চাষ করা হচ্ছে আগাম শীতকালীন শিম, মুলা ও বাঁধাকপি। বৃষ্টির কারণে কৃষকরা সময়মতো সবজি চাষ শুরু করতে না পারলেও শেষ দিকে পুরোদমে চাষে নেমে পড়েছেন তারা। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়লে চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণ আগাম জাতের সবজি উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন তারা।
জেলার সাতমাইল, চুড়ামনকাটি, বারিনগর, হৈবতপুর, কাশিমপুর, বন্দবিলা, লেবুতলা, নোঙরপুর ও ইছালি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠে ধুম পড়েছে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, মুলা, লালশাক-পালংশাক ও সবুজ শাকসহ নানা ধরনের সবজি চাষের। মূলত আগাম শীতকালীন চাষ করলে ফসলের বেশি দাম পাওয়া যায়। এ কারণে সবজি ফলাতে চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। তাই পুরোদমে চলছে মাঠ প্রস্তুত, বীজ বপন, চারা রোপণ ও পরিচর্যা। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শুধু সবুজের সমারোহ।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ সবজি যশোর থেকে সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাইকারদের হাত ধরে চলে যায় রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০ শতাংশ জমিতে নানা জাতের আগাম সবজি চাষ হয়েছে। এসব সবজি পরিচর্যা করছেন কৃষকরা। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বাজারে তোলা হবে এসব সবজি।
যশোর সদর উপজেলার ইছালী ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ শুধু সবজির ক্ষেত। ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, পালং শাক, লালশাক, সবুজ শাক, বেগুনও টমেটোসহ নানা জাতের সবজি চাষ শুরু করেছেন কৃষক। যশোর-মাগুরা মহাসড়কের পাশে রাজাপুর মাঠে কথা হয় সবজি চাষি আব্দুল গফুরের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ বছর দীর্ঘ অনাবৃষ্টি আর তীব্র গরমের কারণে সময়মতো শীতকালীন সবজির চাষ শুরু করতে পারেনি। এ কারণে এবার একটু দেরি হয়েছে। আমি দেড় বিঘা জমিতে কপি ও ১০ কাটা জমিতে লালশাক চাষ করেছি। আশা করি, এখান থেকে ভালো লাভ করব।
একই মাঠে কথা হয়, সাহেব আলী নামে আরেকজন কৃষকের সঙ্গে। তিনি বলেন, শীতকালীন সবজি উৎপাদনে উপযুক্ত সময়ের আগে আমরা সবজি বাজারে তুলতে চাই। এজন্য একটু আগেভাগে চাষ শুরু করেছি। আশা করছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকবে এবং ভালো দাম পাব। তবে সবজি বাজারে তোলার সময় কাক্সিক্ষত দাম পাব কি নাÑতা নিয়ে শঙ্কিত।
নোঙ্গরপুর মাঠে কথা হয় সবজি চাষি শরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতি বছর আমরা এ অঞ্চলের কৃষকরা বিপুল পরিমাণ জমিতে বাঁধাকপির আবাদ করি। কয়েক দিনের মধ্যে এসব ফসল বাজারে তুলতে পারবেন বলে জানান তিনি।
যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সবজি জোন হিসেবে পরিচিত যশোর। প্রায় সারা বছর ধরে জেলার কৃষকরা নানা জাতের সবজি চাষ করেন। কৃষকরা শীত সামনে রেখে যতœ সহকারে সবজি চাষ শুরু করেছেন। শীতকালীন আগাম জাতের এসব সবজি চাষ লাভজনক করে তুলতে আমাদের মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের কারিগরি সহায়তার পাশাপাশি নানাভাবে সহযোগিতা করছি।