মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: রোজার মাসে তুলনামূলকভাবে লেবুর চাহিদা একটু বেশিই থাকে। বিশেষ করে ইফতারে লেবুর শরবত ছাড়া যেন চলেই না। এজন্য বাজারে এর চাহিদাও বেড়ে যায়। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা লেবুর দাম ইচ্ছামতো বাড়িয়ে অধিক মুনাফা লুটে নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি যশোরের বাজারে। রোজার আগের দিনই প্রকারভেদে লেবু বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা হালি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সামনে রোজায় লেবুর দাম আরও বাড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
বৃহস্পতিবার বিকালে যশোরের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লেবুসহ সব ধরনের সবজির দাম আকাশছোঁয়া। ক্রেতারা জানান, রোজা উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিতভাবে মুনাফা লুটে নিচ্ছেন নিত্যপণ্যের বাড়তি দামে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক হালি দেশি কাগজি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। অর্থাৎ একটির দাম ২০ টাকা। আর মাঝারি সাইজের এলাচি লেবুর হালি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আর বড় সাইজের কলম্বো লেবুর হালি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি দোকানি আব্দুর রহমান বলেন, লেবুর দাম কত কয়েক দিন ধরেই বাড়তি। তবে রোজায় চাহিদা বেশি হওয়ায় আজ একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আড়ত থেকে বাড়তি দামেই তাদের লেবু কিনতে হচ্ছে।
পাশেই কথা হয় শরিফুল ইসলাম নামে এক লেবু বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে এই সময়ে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ লেবুর সরবরাহ থাকে। তবে এ বছর অপেক্ষাকৃতভাবে বৃষ্টি কম হওয়ায় লেবুর ফলন কম হয়েছে। এ কারণে দাম একটু বেশি। সামনে বাজারে সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে বলে তিনি দাবি করেন।
বাড়তি দাম নিয়ে ক্রেতারাও হতাশা প্রকাশ করেন। বাজারে কথা হয় সাঈদুর রহমান নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, রোজার মাসে আমার ইফতার ও খাদ্যতালিকায় লেবু ছাড়া চলে না। মাত্র কয়েক দিন আগেও এসব লেবু ১০ থেকে ১৫ টাকায় প্রতিটি বিক্রি হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য রোজাকে কেন্দ্র করে দাম বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু লেবু নয়, বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। এ অবস্থায় মানুষ কী খেয়ে রোজা রাখবে?
যশোরের বাজারে লেবুর পাশাপাশি কাঁচা বাজারেও উত্তাপ দেখা গেছে গতকাল। বাজার ঘুরে দেখা যায়, লাউ প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, প্রতিকেজি বেগুন ৬০ টাকায়, সজনে ১২০, কলা ৩০, পেঁপে ২৫, ঝিঙে ৮০, ওস্তা ৮০, বরবটি ৮০, শিম ৬০, ভেণ্ডি ৮০, কুশি ৮০ ও টমেটো ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজি বিক্রেতা বলেন, পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় এর বড় প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে, যে কারণে প্রতিটি সবজির দাম বেশি। এছাড়া প্রতি কেজি আদার দাম ১২০, রসুন ১৪০ ও পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
শাহজাহান আলী নামে এক ক্রেতা বলেন, মাছ, মাংস, ডিমের দোকানে তো যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এখন শাকসবজি কিনে কোনো রকম সংসারের চাহিদা মেটাব, তাও সম্ভব হচ্ছে না। সবজি কিনতে গেলেই আর অন্য বাজার করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এমনিতে বাজারের অবস্থা খারাপ চলে আসছে। তারপর রোজা। রোজাকে পুঁজি করেই ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আনোয়ার হোসেন নামে এক সবজি বিক্রেতা বলেন, সবজির দাম কয়েক দিন ধরেই একই রকম। তবে রোজা উপলক্ষে দাম বাড়ানো হয়েছে বলে ক্রেতারা যে অভিযোগ করছেন, তা শতভাগ সত্য নয়। রমজান মাসে এমনিতে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। সেই তুলনায় সবজির দাম আগের মতোই আছে।