মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: অনেকেই রমজান মাসের শুরুর দিকে ঈদের কেনাকাটা করে ফেলেন। এতে মার্কেটে ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে যেমন স্বস্তিতে কেনাকাটা করা যায়, তেমনি দামও একটু কম থাকে। কিন্তু প্রায় সব দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে বিপণিবিতানগুলোয় এ বছরের চিত্র একটু ভিন্ন। ক্রেতার ভিড় ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করলেও অতিরিক্ত দামের কারণে হতাশ হয়ে অনেকে ফিরে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে ক্রেতা সমাগম একটু বাড়লেও দাম শুনে ফিরে যাচ্ছে মানুষ।
যশোর বড়বাজারের কাপুড়িয়াপট্টি, ফেন্সি মার্কেট, কালেক্টরেট মার্কেট ও মুজিব সড়কের শপিংমলগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি দোকানেই গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে সারি সারি সাজানো রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা বাহারের তৈরি পোশাক। ক্রেতা দেখলেই হাঁকডাক দিচ্ছেন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধরা। তবে দাম শুনলেই চোখ কপালে উঠছে ক্রেতাদের। প্রতিটি পণ্যেই ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ দাম বেড়েছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। ক্রেতাদের এসব অভিযোগে ব্যবসায়ীরা অজুহাত তুলছেন ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের কারণ হিসেবে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বড়বাজার ও কালেক্টরেট মার্কেটে অন্যান্য বছরে এ সময়ে ব্যবসা জমজমাট হলেও এখন তেমন অবস্থা তৈরি হয়নি। তবে মুজিব সড়ক এলাকার শপিংমলগুলোতে সামর্থ্যবাণ মধ্যবিত্তদের একটু কেনাকাটা বাড়লেও ব্যবসায়ীরা সন্তুষ্ট নন।
মুজিব সড়কের ব্লু স্পিরিং নামে একটি তৈরি পোশাকের দোকানে গিয়ে দেখা যায় দেশি-বিদেশি বাহরি ডিজাইনের বিভিন্ন আইটেমের পোশাক সারি সারি সাজানো রয়েছে। দোকানটিতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেলেও বেচাকেনা তেমন হচ্ছে না। ক্রেতারা দাম যাচাই-বাছাই করেই চলে যাচ্ছেন। দোকানে কথা হয় কাকলি শারমিন নামে এক গৃহিণীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল থেকে প্রতিটা দোকানেই ঘুরেছি। প্রায় সব দোকানেই কাপড়ের দাম ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। নিত্যপণ্যের বাজারে গিয়েও যেমন স্বস্তি ঠিক এখানেও কোনো স্বস্তি পাচ্ছি না।
প্রায় একই কথা বলেন, আমিনুর রহমান নামে আরেক ক্রেতা। তিনি বলেন, ১৫ রোজার পর থেকে ঈদের বাজারে ক্রেতাদের পা ফেলার সময় থাকে না। এ কারণে আজ বাজারে এসেছি। কিন্তু দাম শুনে রীতিমতো হতাশ হচ্ছি। গত বছরে যে পোশাক ১০০০ টাকায় কিনেছি আজ তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এ অবস্থায় অনেকেই ঈদে পোশাক কিনতে পারবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মুজিব সড়কের তৈরি পোশাকের দোকান ব্লু স্প্রিংয়ের বিক্রয় প্রতিনিধি আশিকুর রহমান বলেন, তারা এ বছর ঈদে দেশি-বিদেশি নানা ধরনের পোশাকের সমাহার ঘটিয়েছে। এর মধ্যে মেয়েদের ইন্ডিয়ান নাইরা ড্রেস ২০০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এবার ঈদে এই ড্রেসটি তরুণীদের কাছে বেশি পছন্দ। এছাড়া ইন্ডিয়ান সারোয়া লেহেঙ্গা স্কাটও খুব চাহিদা বেশি। এই ড্রেসটি ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছেলে ও মেয়ে বাচ্চাদের জন্য নানা ডিজাইনের পোশাক আছে ওই দোকানে বলে তিনি জানান। এর বাইরে সিল্ক ও কাতানের থ্রিপিসের পাশাপাশি দেশি তৈরি সুতি কাপড়ের অনেক আকর্ষণীয় তৈরি পোশাকের বেশ চাহিদা পাচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।
নকশী বুননের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, ঈদে ক্রেতাদের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তার দোকানে দেশি তৈরি অনেক তৈরি পোশাক আছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসব থ্রিপিসের দাম ২০০০ থেকে ৬০০০ টাকা দাম। তবে ক্রেতাদের বেশি চাহিদায় রয়েছে ইন্ডিয়ান থ্রিপিস সেতারা, গঙ্গা, পেনসারা ও ভিনহি। তিনি বলেন, বাজারে দেশি-বিদেশি সব পোশাকের দাম বেশি। এর বড় কারণ এলসি সংকট। এসব পোশাক ও পোশাক তৈরির সুতা এবং কাঁচামাল বাইরে থেকে এলসির মাধ্যমে আনতে হয়েছে। এসব কারণে খরচ বেড়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
ঈদ উপলক্ষে নানা ব্র্যান্ডের পাঞ্জাবিও এসেছে দোকানগুলোতে। তবে এর দাম অনেক বেশি গতবারের চেয়ে। মুজিব সড়কের লাল-সবুজ-রঙের দোকানে গিয়ে দেখা যায় দেশি-বিদেশি নানা ডিজাইনের পাঞ্জাবি রয়েছে। এর মধ্যে স্মার্ট গ্লোরি, হাজি ফ্যাশন, বিগ মাস্টার, সিল্ক আর, সুলতান, খানদানি পাঞ্জাবি বেশ চাহিদা ক্রেতাদের। তবে এসব পাঞ্জাবি ২০০০ থেকে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে।
দোকানটির ম্যানেজার নাজমুল হুসাইন বলেন, অন্যান্য বছরে এ সময়ে পাঞ্জাবির কেনাকাটা পুরোদমে শুরু হলেও এখন পর্যন্ত তেমন বেচাকেনা শুরু হয়নি। তবে আশা করছি, আরও দুই-তিন দিনের মধ্যে ক্রেতারা বাজারমুখী হবেন।