জাওয়াদের প্রভাব

যশোরে গম ও রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

প্রতিনিধি, যশোর: ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের শক্তি কমে গভীর নিন্মচাপে পরিণত হয়ে দু’দিন ধরে যশোরসহ দেশের অনেক জেলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। গতকালের মতো আজও বৃষ্টি অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। অসময়ে টানা এ বৃষ্টির কারণে পাকা আমন ধানসহ যশোরাঞ্চলে সদ্য রোপণকৃত সবজি, গম ও রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।

যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘঁাঁটির আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, নিন্মচাপের প্রভাবে গতকাল এ অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানান, বৃষ্টির কারণে দিনের চেয়ে রাতের তাপমাত্রা দুই থেকে তিন ডিগ্রি কমে যায়।

সদর উপজেলার ইছালি, বাঘারপাড়া উপজেলার সিলুমপুর, চৌগাছা উপজেলার কুঠিপাড়া, চাঁদপুর, কয়ারপাড়া ও সিংহঝুলীসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে বৃষ্টির পানিতে ভিজছে দু’দিন আগে কেটে রাখা মাঠের ধান, স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে কৃষকের।

ইছালি এলাকার কৃষক মিলন গাজী বলেন, মাঠে কেটে রাখা ধান জমিতে স্তূপ করে বৃষ্টি থেকে রক্ষার চেষ্টা করছি। কোনো কোনো কৃষক আগে কেটে রাখা ধান জমিতে শুকিয়ে যাওয়ার পর বাড়িতে এনে ঝাড়ার প্রস্তুতি নেন কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে ধান ঝাড়া বন্ধ। বাড়ির আঙিনায় গাদা দিয়ে অথবা পলিথিন দিয়ে তা রক্ষার চেষ্টা করছেন তারা। বেশিরভাগ কৃষকের ধান এখনও জমিতে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ধান বাড়িতে আনতে পারবে কি নাÑতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

কুঠিপাড়ার কৃষক আকবর আলী জানান, কৃষকের স্বপ্ন পুরোনো হয় এমন নজির খুবই কম। চলতি মৌসুমে প্রায় চার বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করি। আবহাওয়া ভালো থাকায় বাম্পার ফলনের আশা ছিল। ধান বাড়িতে এনে বিক্রি করার পর একটি দেনা পরিশোধ করার চিন্তা করি কিন্তু সেটি হবে কি না সন্দেহ। যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাতে ধান বাড়িতে আনাই এখন দুরূহ ব্যাপার। বৃষ্টির তিন দিন আগে ধান কেটে মাঠে রাখা ছিল। বিচালি প্রায় শুকিয়ে গেছে, ঠিক সেই সময় বৃষ্টি। ধান রক্ষায় পরিবারের সবাই মাঠে গিয়ে ওই ধান জমিতে স্তূপ করে রেখেছি।

কৃষকরা জানান, আমন মৌসুমে ধানের ফলন যাই হোক গো-খাদ্য বিচেলি খুব ভালো হয়। আর আমনের বিচেলির দামও ভালো পাওয়া যায়। এ কারণে সবাই বিচেলি তৈরির জন্য পাকা ধান মাঠে কেটে রাখেন। রোদে শুকানোর পার বাড়িতে এনে ধান ঝেড়ে বিচেলি বিক্রি করা হয়। তবে যে পরিস্থিতি হয়েছে এ বছর কোনো কিছুই আর হবে না।

কৃষি অফিস বলছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমন নিয়ে কৃষক কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিচু জমির আইল কেটে জমি থেকে পানি বের করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বৃষ্টি দীর্ঘ না হলে ধানের তেমন ক্ষতি হবে না বলে জানান তারা। এদিকে হঠাৎ বৃষ্টিতে যশোর অঞ্চলের সবজি, গম ও রবি ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, যশোর অঞ্চলে সবেমাত্র রবি ফসল ও গমের চারা বপন করা হয়েছে। পাশাপাশি কিছু শীতকালীন সবজির চারা লাগানো হয়েছে। বৃষ্টির কারণে এসব ফসল অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, জেলার আট উপজেলার বিভিন্ন মাঠে এখন রবি ফসল ও গম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে নানা জাতের সরষে ও মসুর। আর ৪৪০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে গম। এসব জমিতে সবে মাত্র সরষে, মসুরি ও গমের বীজ বোনা হয়েছে। অঙ্কুর গজানো শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে টানা এ বৃষ্টি কৃষকের জন্য মহাবিপদ ডেকে এনেছে। বেশিরভাগ জমির চারা বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বছরটা রবিশস্য ও গম কৃষকদের জন্য মোটেও সুখকর নয়। কারণ রবি ফসল চাষের জন্য এ সময়ের বৃষ্টি মোটেও উপযোগী নয়। বরং বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, সাধারণত এ সময় বৃষ্টি হলে এ ধরনের ফসলের ক্ষতি হয়। এখানে সেই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। রবি ফসলের পাশাপাশি আমরা গম ও সদ্য রোপণকৃত কিছু সবজি নিয়েও শঙ্কায় আছি। বৃষ্টির কারণে এসব সবজির উৎপাদন বিলম্বিত হওয়ার হতে পারে, যার প্রভাব শীতের সবজি বাজারে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ মুহূর্তে আসলে কী পরিমাণ জমির রবিশস্য ও গমের ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০