Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 12:13 pm

যশোরে থমকে আছে ভৈরব নদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: থমকে গেছে যশোর শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদতীরের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান। সহসা শুরু হচ্ছে না এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান। নদের গুরুত্বপূর্ণ এ অংশের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) শেষ পর্যন্ত নদী রক্ষা কমিশনের শরণাপন্ন হয়েছে। প্লাবন ভূমি শনাক্ত ও কমিটি গঠনের জন্য পাউবোর পক্ষ থেকে এরই মধ্যে নদী কমিশনের কাছে লিখিতভাবে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে নদী রক্ষা কমিশন কবে নাগাদ নদের এ অংশের অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করার কাজ শুরু করবে সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। ফলে ভৈরব নদের শহরাংশের খনন অনিশ্চত হয়ে পড়েছে।
যশোর শহরের দড়াটানা সেতুর পূর্ব পাশের হাজী মুহম্মদ মুহসীন ও জেল রোডের পাশ দিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়িসহ প্রায় ১৫০টিরও বেশি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। এ ছাড়া নদের প্লাবন ভূমিতে রয়েছে আরও কয়েকটি বহুতল ভবন।
যশোর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, এর আগে শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা সেতুর পশ্চিম পাশের ৮৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে পূর্ব পাশের অবৈধ স্থাপনা আর উচ্ছেদ করা হয়নি। কয়েক মাস ধরে সার্ভে করে নদের পূর্বাংশের কাঠেরপুল থেকে নীলগঞ্জ সেতু পর্যন্ত ৫৯টি স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব তালিকা প্রস্তুত করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানোর পর উচ্ছেদ অভিযানের নিয়মানুসারে এরই মধ্যে অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা সরিয়ে ফেলার নির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়ে নোটিস প্রদান করা হয়েছে। নোটিসের সময় পার হওয়ার পরপরই এখানে উচ্ছেদ করা হবে।
ভৈরব নদের শহরাংশের কাঠেরপুল থেকে নীলগঞ্জ সেতু পর্যন্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরুর প্রস্তুতি চললেও পশ্চিমাংশে দড়াটানা সেতু পর্যন্ত উচ্ছেদ হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নে তিনি জানান, নদীর এ অংশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে তাদের মাল্টিপল ডিপার্টমেন্ট অ্যাকশনে কাজ করতে হবে। এজন্য এরই মধ্যে তারা এ অংশের প্লাবন ভূমি শনাক্তের জন্য নদী রক্ষা কমিশনের কাছে চিঠি লিখেছেন। ওই চিঠিতে তাদের পরামর্শের পাশাপাশি একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যাতে ওই কমিটি প্লাবন ভূমির আগের লাইনটা চিহ্নিত করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। কেননা এ অংশের উচ্ছেদ পানি আইন অনুযায়ী করতে হবে। যেহেতু এ অংশে ভূমি জরিপ ভুল আছে, সেজন্য তাদেরও সঙ্গে রাখতে হবে। অনেক ডিপার্টমেন্টের সমন্বিত উদ্যোগেই এটি সম্পন্ন করতে হবে।
এ ব্যাপারে ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ জানান, ১৯২৬ সালের ভূমি জরিপ (এসএ) রেকর্ডের সঙ্গে নদীর প্লাবন ভূমি আইন অনেকটা সাংঘর্ষিক। প্লাবন ভূমি আইন বাস্তবায়ন করতে গেলেই দখলদাররা ১৯২৬ সালের রেকর্ড অনুযায়ী আদালতে মামলা করার সুযোগ পাবে এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নানা ফন্দিফিকির করে উচ্ছেদ আটকে দিতে পারে। এতে খনন প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হবে। ২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু এখনও অভিযান শেষ হলো না। তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তাবায়ন হবে কেমনে? দ্রুত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে নদে জোয়ার-ভাটা ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।
উল্লেখ্য, শহরবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে যশোরে এসে ভৈরব নদ খননের প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২৭২ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে পাঁচ বছর মেয়াদি ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’ শুরু হয়। প্রকল্পের আওতায় নদের ৯২ কিলোমিটার এলাকা খনন করা হবে।