মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: যশোরে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক কৃষক। জেলার কেশবপুর উপজেলার মধ্যকূল রাজবংশি পাড়া এলাকার হরিহর নদীর বুকে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করে, একদিকে যেমন স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন একদল কৃষক-কৃষাণি। অন্যদিকে, স্বল্প সময়ে বেড বা ধাপে সবজির চাষ করে এলাকায় সবজির চাহিদা মিটিয়ে বাইরে বিক্রিও করছে তারা। মূলত, যাদের বসতভিটা ছাড়া আর কোনো কৃষি জমি নেই। তাদের মধ্যে অধিকাংশ কৃষক-কৃষাণি ওই নদীর শেওলা দিয়ে ধাপ তৈরি করে তার ওপর বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব সবজি বেডে চাষ করা হয়েছে লাল শাক, সবুজ শাক, পুঁইশাক, ডাঁটা শাক, পালন শাক, মিষ্টিকুমড়া, কচু শাক, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি। এছাড়া ভাসমান বেডের ওপর মাচা (বান) তৈরি করে লাউ ও চালকুমড়ার চাষ করা হয়েছে। এসব সবজি বেড পরিচর্যা করার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে ২টি ডোঙ্গা নৌকা।
কৃষক রতন বিশ্বাস জানান, এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে সংসারের প্রয়োজন মিটিয়েও অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তাদের।
জানা গেছে, শেওলায় পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে হরিহর নদী। ওই নদীর তীরবর্তী মধ্যকূল রাজবংশি পাড়ার জেলেরা নদীতে মাছ শিকার করতে ব্যর্থ হয়ে বেকার হয়ে পড়েন। এ সময় হরিহর নদীর শেওলাকে কাজে লাগিয়ে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি বিভাগ একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। কৃষি বিভাগের তরফ থেকে ভাসমান বেডে সবজি চাষের ওপর মধ্যকূল রাজবংশি পাড়ার শতাধিক কৃষক-কৃষাণিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
মধ্যকূল ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনাথ বন্ধু দাস জানান, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কৃষকরা নদীর শেওলা প্রথমে স্তূপ করে রাখেন। শেওলা পচে ধাপ তৈরি হলে তার ওপর দেয়া হয় ভার্মি কম্পোস্ট। এরপর সবজির বীজ বপন করা হয়। প্রতিজন কৃষক ৩৬টি বেড তৈরি করে তার ওপর সবজি চাষ করেছেন। পযার্য়ক্রমে আরও সবজি বেড তৈরি করার প্রস্তুতি চলছে।
মধ্যকূল রাজবংশি পাড়ার পারুল বিশ্বাস জানান, তিনি ওই নদীতে তিনটি ভাসমান বেড করেছেন। যার ওপর লাল শাক, সবুজ শাক, পুঁইশাক, ডাঁটা শাক এবং ভাসমান বেডের ওপর মাচা (বান) করে লাউ ও চালকুমড়ার চাষ করা হয়েছে। এতে তিনি সংসারের প্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, যাদের কৃষি জমি নেই তারা এই পদ্ধতিতে সবজি আবাদ করলে লাভবান হবেন। কোনো প্রকার কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই তিনি বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছেন। মধ্যকূল রাজবংশি পাড়ায় হরিহর নদীর বুকে সবজি আবাদের লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি বিভাগ ভাসমান বেডে সবজি ও মশলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।