প্রতিনিধি, যশোর: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে যশোরে নিত্যপণ্যের বাজারে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ সবজির মূল্য ১০০ টাকার ওপরে। আলু, পেঁয়াজ, ডিম, চিনি সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাঙালি চাইলেই এখন আর আলুভর্তা বা ডিমভাজি ভাত খেতে পারছে না। সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বাজারের সব পণ্য। সিন্ডিকেটের নির্ধারিত দামেই বিক্রি হচ্ছে সব। ভোক্তারা বলছেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার যশোরের বড়বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া যায়।
গতকাল যশোরের বড়বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি পিস সাড়ে ১২ টাকা, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৯০ টাকা, খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৩২ টাকা।
অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর আলুর খুচরা বিক্রয় মূল্য প্রতি কেজি ৩৫-৩৬ টাকা, ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি পিস ১২ টাকা, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬৪-৬৫ টাকা ও গত ১০ মে পরিশোধিত খোলা চিনির খুচরা বিক্রয় মূল্য প্রতি কেজি ১২০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ভোক্তাদের আক্ষেপ সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরাই বাজারের পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে। এমনই অভিমত ব্যক্ত করলেন বাজারে আসা ক্রেতা বেসরকারি চাকরিজীবী শহরের বারান্দিপাড়ার আইয়ুব আলী। এ ক্রেতা আরও জানান, দুর্মূল্যের বাজারে আগে কম টাকায় পরিবারের সদস্যদের শুধু আলুভর্তা, ডিমভাজি ও ডাল ভাত দিয়ে দুবেলা খাবার জুটানো যেত। কিন্তু সিন্ডিকেটব্যবসায়ীরা সেই আলু আর ডিমের ওপরও থাবা বসিয়েছে।
এদিকে, বড়বাজারে পর্যাপ্ত সবজির সরবরাহ থাকলেও তাতে হাত দেয়ার উপায় নেয়। ভালো মানের সবজি ১০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। বিক্রেতা নাসির আলী জানান, তিনি গতকাল কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৪০ টাকা, বেগুন ১২০ টাকা, উচ্ছে ১২০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, করোলা ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, মুখিকচু ১০০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, ওল ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৭০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, পটোল ৭০ টাকা ও বাঁধাকপি ৬০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তিনি আরও জানান, পাইকারি বাজার থেকে তাদের বেশি দামে এসব সবজি কিনতে হচ্ছে।
বড়বাজারের আড়তদার জহিরুদ্দিন কাজল জানান, সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, এ কারণে বাজারে সরবরাহও কম, যা আসছে তার দাম অনেক বেশি। তিনি আরও জানান, আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী দু সপ্তাহে সবজির বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তাছাড়া এ সময় শীতের সবজিও বাজারে চলে আসবে।
অপরদিকে প্রজনন মৌসুমে ১২ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২২ দিনের জন্য মা ইলিশ শিকার বন্ধের ঘোষণার পরের দিন গতকাল বড়বাজার মাছবাজারে অন্যান্য মাছের কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে গেছে। দেখা যায়, প্রতি কেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা, দেড় কেজি ওজনের রুই মাছের কেজি ৩৫০ টাকা, ৩ কেজি ওজনের রুই মাছের কেজি ৫৫০ টাকা, দেড় কেজি ওজনের কাতলের কেজি ৩৫০ টাকা, ৩ কেজি ওজনের কাতলের কেজি ৪০০ টাকা, ৫ কেজি ওজনের কাতলের কেজি ৫৫০ টাকা, ২টায় কেজি তেলাপিয়া ২২০ টাকা, ২ কেজি ওজনের সিলভার কার্পের কেজি ৩৫০ টাকা, দেশি ট্যাংরা ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।