কাজী সালমা সুলতানা: যশোরে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ইতিহাস পর্যায়ে অন্যান্য জেলার তুলনায় ব্যতিক্রম তথ্যের সংবাদ পাওয়া যায়। ১৯৪৭ সালের জুন মাসে ভারত বিভাগের ঘোষণার পর বঙ্গদেশে যে ভাষা বিতর্ক শুরু হয়েছিল তখনই যশোরের স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে হলেও বিতর্কে অংশগ্রহণ করে। তারা বাংলা ভাষার বিরুদ্ধকারী চক্রান্তকারীদের বক্তব্যের প্রতিবাদ করে।
১৯৪৭ সালে জুলাই মাসে দৈনিক আজাদে বাংলা ভাষা-বিরোধী নিবন্ধ ও বক্তব্য প্রকাশিত হতে থাকে। যশোরের মাইকেল মধুসূদন কলেজের ছাত্ররা রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে দাবি তোলে। ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে এম এম কলেজের ছাত্ররাও বাংলা ভাষার পক্ষে দাবি তোলে।
পাকিস্তান গণপরিষদেও ভাষা-বিষয়ক বিতর্ক যশোরে এসে পৌঁছে ২৬ ফেব্রুয়ারি। ২৮ ফেব্রুয়ারি এম এম কলেজে এলডি মিত্র হলে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এ সময় ২ মার্চ ছাত্রসভা ও ছাত্র ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ছাত্ররা তাদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থনের জন্য রাজনৈতিক সংগঠনের শরণাপন্ন হয়। ২ মার্চ ছাত্ররা সফলভাবে তাদের ধর্মঘট পালন করে।
ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ মার্চের কর্মসূচির কথা শহরে পৌঁছায়। এ কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে জেলা সংগ্রাম পরিষদ ৭ মার্চ সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ১০ মার্চ জেলা ম্যাজিস্ট্রট শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে। এই পরিস্থিতিতে ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতাদের যৌথ সভায় ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে মত দেন।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা একে একে মিছিল করে এমএম কলেজে এসে পৌঁছাতে শুরু করে। এরপর শুরু হয় যৌথ বিশাল মিছিল। যশোরের স্কুল-কলেজের ছাত্রীরাও এদিন মিছিলে অংশগ্রহণ করে। এ সময় মিছিলকারীদের কাছে সংবাদ পৌঁছে যে, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ও যশোর পিটিআই স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ধর্মঘট ও মিছিলে যোগ দিতে বাধা দিচ্ছে। পুরো মিছিলটি তখন এক মিছিলে পরিণত হয়ে ভাষার দাবিতে স্লোগানে মুখরিত হয়। এ সময় পুলিশ মিছিলে হামলা করলে বহু শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার ও আহত হয়। ছাত্রদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ১২ মার্চ কলেজে ছাত্র ধর্মঘট এবং ১৩ মার্চ শহরে হরতালের ডাক দেওয়া হয়। হরতালের দিন বিক্ষোভ মিছিল কালেক্টরের ভবন জনগণ ঘেরাও করে। এ সময় পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করে।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে জনগণের মন অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা থেকে শাসক মহল নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকে। কিন্তু ছাত্ররা কোনো ষড়যন্ত্রে প্রভাবিত না হয়ে রাষ্ট্র ভাষা বাংলার সংগ্রাম অব্যাহতভাবে জারি রাখে।