প্রতিনিধি, যশোর: সরিষার হলুদ ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে যশোরের দিগন্ত জোড়া মাঠ। জেলার বিস্তীর্ণ মাঠগুলোতে এবার ব্যাপকহারে সরিষার চাষ হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই মনে হচ্ছে সরিষা ফুলের হলুদ আচ্ছাদনে ঢেকে আছে চারিদিক। চলতি মৌসুমে যশোরাঞ্চলে বিগত বছরের চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া সরিষা চাষের উপযোগী থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা। সরিষার ফুলে বাতাসের দোলায় দোল খাচ্ছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, যশোর জেলায় এ বছর ২৯ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু সেটি অতিক্রম করে এ বছর চাষ হয়েছে ৩০ হাজার ২৬৫ হেক্টর, যা বিগত বছরের চেয়ে ৫ হাজার হেক্টর জমি বেশি। ভোজ্যতেলের আমদানি কমাতে সরিষার আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
যশোর ফতেপুর মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে যেন হলদে রঙ ছড়ানো হয়েছে। বিস্তীর্ণ মাঠে সরষে ফুলে ম-ম গন্ধ ছড়াচ্ছে মৌমাছি। প্রকৃতির এ সুন্দর রূপ যেন মাঠের চেহারা পুরোটায় পাল্টে দিয়েছে। কৃষকরা জানান, এব ছর তারা সরিষা চাষের জন্য ভালো কিছু জাত পেয়েছে। আমন ধান ওঠার পর ও বোরো আবাদের আগে তিন মাসের মধ্যে বাড়তি একটি ফসল হিসেবে বারি-৯ ও ১৪ সরিষার চাষ করছেন কৃষকরা। এ জন্য কৃষি বিভাগ বিঘা প্রতি কৃষককে এক কেজি ও ২০ কেজি সার প্রণোদনা দিয়েছে কৃষি বিভাগ। এই সরিষায় এখন যশোরের মাঠের পর মাঠ চাষ হয়েছে।
চাঁদপাড়া মাঠে কথা হয় শাহাজাহান নামে এক সরিষা চাষির সঙ্গে। তিনি বলেন, ধানসহ অন্যান্য ফসলের চেয়ে সরিষা আবাদে খরচ কম লাভ বেশি। এজন্য আমরা এ বছর সরিষা আবাদ করেছি। জমির ঊর্বরতা ধরে রাখার জন্য মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়ে সরিষা আবাদ করা হয়ে থাকে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে সরিষা আবাদের সময় নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকলেও এ বছর সেই পরিস্থিতির মুখে পড়েনি। আশা করা যায়, সামনে কোনো দুর্যোগ না এলে ভালো ফলন পাব।
একই মাঠে কথা হয়, আব্দুর রহমান নামে আরেক চাষির সঙ্গে। তিনি বলেন, এ বছর পোকামাকড়ের উপদ্রব অনেক কম। কৃষি বিভাগ থেকে সরিষা আবাদ বাড়াতে আমাদের বিঘা প্রতি এক কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দিয়েছে। প্রণোদনার এ বীজ, সার পেয়ে আমরা সরিষা আবাদ করেছি। আশা করছি, ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে আমরা এসব সরিষা ঘরে তুলতে পারব।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, দেশের ভোজ্যতেলের আমদানি কমাতে সরকার গত কয়েক বছর ধরে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় যশোরাঞ্চলে সরিষাসহ অন্যান্য রবি ফসলের চাষাবাদ বাড়ানো হয়েছে। এ বছর রেকর্ড আবাদ হয়েছে যশোরে। তিনি বলেন, মানুষের শরীরে যে ক্যালরি প্রয়োজন তার ৩০ ভাগ তেল ও চর্বি থেকে আসা জরুরি। অথচ ভেজালের ভিড়ের কারণে তা আসে মাত্র ৯ ভাগ। যা খুবই কম। এসব দিক বিবেচনায় বাংলাদেশের মাঠিতে সরিষা আবাদ বাড়ানোর তাগিদ অনেক আগে থেকেই। তিনি বলেন, জেলার ৮ উপজেলাতেই সরিষা আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে অভয়নগরের একটি এলাকায় প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে বলে তিনি জানান। ওই উপজেলাতেই ২ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। আগামীতের এর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে তিনি জানান।