যশোরে হঠাৎ বৃষ্টিতে কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ

প্রতিনিধি, যশোর: আর মাত্র সপ্তাহখানেক সময় পেলেই নিরাপদে মাঠের বোরো ধান ঘরে তুলতে পারতেন যশোরের বোরো চাষিরা। কিন্তু হঠাৎ শনিবার বিকাল থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে পণ্ড হয়ে গেছে সোনার ফসল ঘরে তোলার সব রকমের আয়োজন।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট এক লাখ ৬১ হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদের মধ্যে এ মুহূর্তে ৬০ হেক্টর জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে পেরেছেন কৃষক। বাকি এক লাখ এক হেক্টর জমির ধান এখনও মাঠে রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জমির ধান শুকানোর জন্য মাটিতে ফেলে রেখেছে কৃষক। এসব ধান এখন পানিতে ভাসছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জেলার বাঘারপাড়ার শেখের বাতান গ্রামের কৃষক জোহর আলী জানান, ধারদেনা আর খরচের বোরো ধান। তাই আশা করেছিলাম এবার ভালো ফলন হওয়ায় একটু লাভ করতে পারব। কিন্তু সে আশা আর কপালে সইল না আমাদের। মাঠে তিন বিঘা জমির ধান পানিতে ভাসছে।

একইভাবে আক্ষেপ করতে থাকেন কৃষক ফুল মিয়া মোল্লা। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে মাঠের ধান মাটিতে পড়ে একাকার হয়ে যায়। প্রথম দিকে হতাশ হলেও পরদিন আকাশ ভালো হয়ে যাওয়ায় আমরা খুশি ছিলাম। মনে করেছিলাম, ঝড়-বৃষ্টি হয়তো এবারের মতো নিস্তার দিয়েছে। কিন্তু আজকের বৃষ্টিতে আর কোনো আশা থাকল না আমাদের। মাঠের ধান পানিতে ভাসছে। এভাবে বৃষ্টি দীর্ঘ হলে ক্ষেতের ফসল ঘরে তোলা যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

শুধু ফুল মিয়া মোল্লা আর জোহর আলী নন, চৌগাছা উপজেলার কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, সাড়ে সাত বিঘা জমিতে ধান করেছি, বৃষ্টিতে অল্প ধান ভিজে গেছে, তবে অধিকাংশ ধান মোটামুটি ভালোভাবে বাড়িতে নিতে পেরেছি। অপর কৃষক টুটুল হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে এক বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ধান কাটার পর তা বৃষ্টিতে ভিজে শেষ। এখন এগুলো কয়েক দিনে রোদে শুকিয়ে তারপর বাড়িতে নিতে হবে।

অপর কৃষক ওহিদুল বলেন, মেইন সড়ক থেকে ধান ক্ষেতের দূরত্ব বেশি। তাছাড়া বৃষ্টিতে মাঠে পানি থাকার কারণে সেখানে কোনো বাহন যাচ্ছে না, সে কারণে কষ্ট হলেও বোঝা বেঁধে মাথায় করে তা সড়কে এনে শুকিয়ে বাড়িতে নিতে হবে।

কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, এখন বৈশাখ মাস, আকাশে মেঘ দেখলেই সবকিছু ভুলে যাচ্ছি। ছয় বিঘা জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু ধান ভিজেছে বৃষ্টিতে, তাই সংসারের অন্য সব কাজ ফেলে ধান বাড়িতে নিতে ব্যস্ত।

শুধু বাঘারপাড়া ও চৌগাছা উপজেলা নয়। জেলার অধিকাংশ উপজেলার মাঠে মাঠে এখন এভাবেই কাঁদছেন কৃষক। সদর উপজেলার ইছালীর হাদিউজ্জামান মিলন বলেন, শ্রমিকের অভাবে তিনি ক্ষেতের ধান কাটতে পারেননি। এখনও বিস্তীর্ণ মাঠে পাকা সোনালি ধান রয়েছে। আবহাওয়া পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় ধান কেটে মাটিতে ফেলে রাখেন। এখন তিন বিঘা জমির ধান পানিতে ভাসছে। অপেক্ষাকৃত নিচু জমি হওয়ায় এসব ধান ঘরে তোলা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন তিনি। ধান ঘরে তুলতে না পারলে সংসার চালাবেন কীভাবে, সেই চিন্তা এখন তার বলে জানান। 

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, যশোরে এখনও মাঠে এক লাখ এক হাজার হেক্টর জমির বোরো আবাদের ধান কাটার অপেক্ষায় রয়েছে। মোট আবাদের ৬০ হেক্টর জমির ধান এরই মধ্যে কৃষক ঘরে তুলতে পেরেছেন বলে তিনি জানান। বাকি ধানগুলো কয়েক দিনের মধ্যেই ঘরে তোলা সম্ভব হতো। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তা পিছিয়ে গেল। তিনি বলেন, আমরা এখনও আশাবাদী, কারণ যশোরে বেশি রড মিনিকেট বলে পরিচিত ধানের আবাদ হয়েছে। এসব ধান সহজেই মাটিতে নুয়ে পড়ে না। তাছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানে শিলাবৃষ্টি হলেও যশোরে এর প্রভাব কম। সে কারণে আশা করছি কৃষকের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। তবে বৃষ্টি বিলম্বিত হলে এসব ফসল নিশ্চিত ক্ষতির মুখে পড়বে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০