প্রতিনিধি, যশোর: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার দুই বান্ধবীকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় দীর্ঘ ১৮ বছর পর আসামি মিন্টু ওরফে কালু (৩৬) ও আজিজ ওরফে আজিজুলের (৩৬) ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে। সোমবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে ওই দু’জনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান সোমবার রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফাঁসি কার্যকরের আগে কারাগারে প্রবেশ করেন ডিআইজি (প্রিজন) ছগির মিয়া, জেলা যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আসিফ ইকবাল, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম, সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীনসহ সরকারি কর্মকর্তারা।
মামলার বিবরণী ও চুয়াডাঙ্গা আদালত সূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা থানার জোড়গাছা হাজিরপাড়া গ্রামের কমলা খাতুন ও তার বান্ধবী ফিঙ্গে বেগমকে ২০০৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রায়লক্ষীপুর গ্রামের মাঠে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তাদের ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলা কাটা হয় ওই দুই নারীর।
নিহত কমলা খাতুনের মেয়ে নারগিস বেগম হত্যার পরদিন আলমডাঙ্গা থানায় মামলা করেন। মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুজনসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অন্য দুজন হলেন একই গ্রামের সুজন ও মহি। মামলা বিচারাধীন অবস্থায় মারা যান আসামি মহি।
২০০৭ সালের ২৬ জুলাই চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সুজন, আজিজ ও মিন্টুর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। এরপর আসামিপক্ষ হাইকোর্টে আপিল করে। পরে ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে ২০১২ সালে ১১ নভেম্বর নি¤œ আদালতের রায় বহাল রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট। চলতি বছর ২৪ ফেব্রæয়ারি আপিল বিভাগ দুই আসামির রায় বহাল রাখেন এবং অপর আসামি সুজনকে খালাস দেন। গত ২০ জুলাই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান সুজন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা পরে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা করলে তাও নামঞ্জুর হয়। ৬ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে কারা অধিদপ্তরকে চিঠি দেয়া হয়। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ৮ সেপ্টেম্বর সেই চিঠি গ্রহণ করে।
সোমবার রাতে আজিজের বড় ভাই সভা মিয়া ও ভাইপো মিজানুর রহমান এবং মিন্টুর চাচাতো ভাই ইকরামুল ও এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে গত শনিবার মিন্টু ও আজিজুলের সঙ্গে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে শেষবারের মতো দেখা করে তার পরিবার। ওই সময় স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।