মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: জালিয়াতির মাধ্যমে যশোর শিক্ষা বোর্ডের আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্তের অংশ হিসেবে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। এর আগে গতকাল সকাল ১০টায় দুদক যশোর কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ দাখিল করেন বোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী
আর রেজা।
শিক্ষা বোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী রেজা জানিয়েছেন, উপসচিব জাহাঙ্গীর আলম কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিতে গেলেও তারা ফিরিয়ে দিয়েছেন।
যশোর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তাসনীম আহমেদ জানান, সকালে শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেন। অভিযোগের ধরন দেখে বিষয়টি দুদককে জানানোর পরামর্শ দেন তারা।
এদিকে ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম। বোর্ড চেয়ারম্যানের দাবি, ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা টাকা ফেরত দিতে যোগাযোগ করছে।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছর যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সরকারি কোষাগারে জমার জন্য আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ১০ হাজার ৩৬ টাকার ৯টি চেক ইস্যু করে। এ ৯টি চেক জালিয়াতি করে ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের নামে এক কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার ১০ টাকা এবং শাহীলাল স্টোরের নামে ৬১ লাখ ৩২ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
সরকারি ছুটি থাকায় ঘটনা প্রকাশ্যে আসার দু’দিন পর গতকাল বোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা দুদক কার্যালয়ে গিয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযোগ দাখিল করেন। এরপর দুপুর ১২টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা বোর্ডে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন। দুদক কর্মকর্তারা সব কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার বিকালে দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর পালিয়ে যান হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম। গতকালও তিনি অফিসে আসেননি। বোর্ডে গিয়ে তার কক্ষটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়।
যশোর শিক্ষা বোর্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবুল বলেন, হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম এর আগেও অনেক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১২ লাখ টাকার একটি দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সেই সময় তদবির করে তিনি সেখান থেকে রক্ষা পান। এরপর আড়াই কোটি টাকা দুর্নীতির সঙ্গেও তিনি জড়িত।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আব্দুস সালাম দুর্নীতি করে উপশহরে দুটি আলীশান বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি এলাকায় ১০ বিঘা জমি কিনেছেন। যশোর জেলা শহরে একটি বেসরকারি ক্লিনিকের মালিকানা রয়েছে তার নামে।
শিক্ষা বোর্ডের একটি সূত্র জানিয়েছেন, অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবু ও তার স্বজন শহরের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি টাকা ফেরত দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
অপরদিকে, শাহীলাল স্টোরের মালিক আশরাফুল ইসলাম বোর্ড কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন- তার কাছে থাকা লক্ষাধিক টাকা ফেরত দিতে চাইছেন।
বোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা বলেন, মাঝে দু’দিন সরকারি ছুটি থাকায় গতকাল আমরা দুদকে একটি অভিযোগ দিয়েছি। দুদক কর্মকর্তারা সেটি গ্রহণ করেছেন।
এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোল্লা আমীর হোসেন বলেন, ঘটনা জানাজানির পর থেকে হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি বলেন, অভিযুক্তরা টাকা ফেরত দিতে আমাদের সঙ্গে
যোগাযোগ করছে। এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া। টাকা ফেরত দিলেও যা হবে তা আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে।