যানজটমুক্ত কুমিল্লা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিগত বছরের তুলনায় এ বছর ঈদযাত্রায় বেশ স্বস্তি নিয়েই বাড়ি ফিরছেন যাত্রীরা। অনেক অফিস আগে থেকেই লম্বা ছুটি পাওয়ায় যাত্রাপথে সুফল মিলেছে যাত্রীদের। ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা হয়ে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু মহাসড়কে গাড়ির কিছুটা চাপ থাকলেও গতকাল দুপুর পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো যানজট তৈরি হয়নি; যাত্রীরা কিছুটা স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছেন। এদিকে সংস্কারকাজ, তিন চাকার যান ও মহাসড়কের পাশে থাকা বাজারের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঈদযাত্রার যে আশঙ্কা পোষণ করা হয়েছিল তেমনটি হয়নি। উল্টো ভোগান্তি ছাড়াই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন যাত্রীরা।

চালক ও যাত্রীরা বলছেন, গাজীপুরের চন্দ্রা পর্যন্ত যেতে গাড়িগুলোর স্বাভাবিকের একটু বেশি সময় লাগছে; তবে চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা, তারপর বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত মহাসড়কে আর কোনো ঝামেলা তারা পাননি।

ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের পথে ১৭ বছর ধরে গাড়ি চালান শংকর বাবু (৪৫)। এলেঙ্গা মোড়ে এসে তিনি বলছিলেন, ঢাকা শহর আর গাজীপুরের কিছু জায়গায় সময় একটু বেশি লাগছে। ঈদের সময় এটা তো লাগবেই। গার্মেন্ট ছুটি হচ্ছে। তবে আমার ১৭ বছরে ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কে এমনটা দেখিনি। খুব স্বাভাবিক। পরে কী হবে জানি না।

ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল হয়ে ধনবাড়ী উপজেলায় যায় বিনিময় পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস। সেই বাসের সুপারভাইজার লাল মিয়া (২৮)। এলেঙ্গা মোড়ে সকাল ৯টায় তিনি বলেন, মহাখালী থেকে যাত্রী নিয়ে গাড়ি ছাড়ছে সকাল ৬টায়। ঢাকা শহরে কিছুটা যানজট আছে। সময়টা লাগছে গাজীপুর পার হতে। তবে চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ফাঁকা। গাড়ি টেনে আসতে পারছে। কোনো সমস্যা হয়নি।

গতকাল সকালে টাঙ্গাইল শহর বাইপাস থেকে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব সংযোগ সড়কের গোলচত্বর এলাকা পর্যন্ত ঘুরে কোথাও যানজট দেখা যায়নি। পথটিতে অন্যদিনের চেয়ে চাপ থাকলেও গাড়ি চলছে স্বাভাবিক গতিতেই।

টাঙ্গাইল জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক এশরাজুল হক বলেন, মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ আরও বেড়েছে। গতকালের চেয়ে বেশি।

বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু পূর্ব সাইড অফিসের চলতি দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাসুম বাপ্পী দুপুর ১২টায় বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু দিয়ে মোট ৪২ হাজার ১৯৯টি গাড়ি চলাচল করেছে। টোল আদায় হয়েছে তিন কোটি ১৮ লাখ আট হাজার টাকা। মহাসড়কে কোথাও কোনো যানজট নেই। পুলিশ সড়কে দায়িত্ব পালন করছে।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের প্রায় ১০৫ কিলোমিটার এলাকা শনিবার দুপুর পর্যন্ত যানজটমুক্ত দেখা গেছে। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন চালক ও যাত্রীরা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, চট্টগ্রামমুখী লেনে গাড়ির চাপ বেশি রয়েছে। আর ঢাকামুখী লেনে পণ্যবাহী পরিবহনের চাপ বেশি। তবে কোথাও যানজট নেই।

ঢাকা থেকে কুমিল্লার উদ্দেশে ছেড়ে আসা এশিয়া পরিবহনের বাসচালক মো. হাফিজ উদ্দিন বলেন, সায়েদাবাদ থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত টুকটাক যানজট ছিল। তবে দাউদকান্দি থেকে কুমিল্লা শহরে প্রবেশ পর্যন্ত তেমন কোনো যানজট নেই। আমরা এখন স্বস্তিতে আছি।

ঢাকা থেকে কুমিল্লাগামী বাসযাত্রী মাহফুজ আলম বলেন, সড়ক সংস্কারের কারণে কয়েক মাস প্রায়ই যানজটে আটকে দুর্ভোগে পড়েছি। তবে শেষ পর্যন্ত স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারছি, এটাই আনন্দের। মানুষ নির্বিঘেœ বাড়ি ফিরতে চায়, এজন্য হাইওয়ে পুলিশকে সব সময় তৎপর থাকতে হবে।

আরেক বাসচালক হানিফ মিয়া বলেন, সংস্কারকাজ বন্ধ এবং হাইওয়ে পুলিশ তৎপর থাকায় মহাসড়কে যানজট নেই। তবে কোথাও দুর্ঘটনার কারণে যানজট যেকোনো সময় লেগে যেতে পারে। এক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশকে সব সময় তৎপর থাকতে হবে।

কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ জানিয়েছে, সদর থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকায় মহাসড়কের এক বছর মেয়াদি চার লেনের পরীক্ষামূলক সংস্কারকাজ চলছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে চান্দিনা উপজেলার কাঠেরপুল এলাকা থেকে এ কাজ শুরু হয়। জানুয়ারি থেকে সংস্কারকাজটি পুরোদমে শুরু হয়।

দুপুরে হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে দিনরাত কাজ হচ্ছে। এখন মহাসড়ক সম্পূর্ণ যানজটমুক্ত। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার অন্যান্য সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ গাড়ি চলাচল করেছে, তবে কোথাও যানজট সৃষ্টি হয়নি। আশা করছি, ঈদযাত্রায় যাত্রীদের কোনো সমস্যা হবে না। মহাসড়ক এখন সম্পূর্ণ ভালো।

রহমত উল্লাহ আরও বলেন, কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত আমাদের এলাকা। প্রতিটি স্থানে আমরা তৎপর রয়েছি। মহাসড়কে আমাদের ৫৬টি টহল দল ও ৩০টি কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে। এ ছাড়া প্রস্তুত রয়েছে ১১টি রেকার টিম। কোথাও কোনো গাড়ি বিকল হলে বা দুর্ঘটনার কবলে পড়লে দ্রুত সেটি অপসারণ করা হচ্ছে। আশা করছি, আমরা যেকোনো সমস্যা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করতে পারব।

সওজ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, বর্তমানে মহাসড়কের কোথাও কোনো ধরনের খানাখন্দ নেই, যে কারণে মানুষ নিরাপদ চলাচল করতে পারছে। মহাসড়কের কুমিল্লার অংশ এখন যানজটমুক্ত। যেসব জায়গায় হাটবাজার আছে সেখানে হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে আমাদের লোকেরাও কাজ করছে। তারা যানজট রোধে সার্বক্ষণিক কাজ করছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০