নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট এখন নিয়মিত ঘটনা। দুই লেনের মেঘনা ও গোমতী সেতুর কারণে কখনও যানজট সৃষ্টি হয় এ মহাসড়কে। আবার কখনও পণ্যবাহী ট্রাক বিকল হয়ে মহাসড়কটিতে যানজট তৈরি করে। এছাড়া ধীরগতির ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের কারণে চার লেনে উন্নীত করা হলেও মহাসড়কটির পূর্ণ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পৃথক ট্রাক লেন নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট নিরসনে করণীয়বিষয়ক বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। এছাড়া মহাসড়কটিতে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের সুপারিশও করা হয়। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উদ্যোগে সচিবালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, গত মে মাসে টানা কয়েক দিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। ফেনী রেল ওভারপাস নির্মাণের কারণে একদিকের সড়ক বন্ধ থাকা ও বিকল্প সড়ক ব্যবহার অনুপযোগী হওয়াই ছিল এর মূল কারণ। তবে নিয়মিতই এ মহাসড়কে যানজট লেগে থাকে। এজন্য ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে ছয় ঘণ্টার পথ কখনও কখনও ১৯-২০ ঘণ্টাও লেগে যায়। এজন্য গত মাসে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক
বিভাগে মহাসড়কটির যানজট নিরসনে জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়।
বৈঠকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হলো: অতিরিক্ত ওজনবাহী যানবাহন, যেগুলা রাস্তার মারাত্মক ক্ষতি করছে, ওজন স্কেলের ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, টোল বুথের সংখ্যা অপ্রতুল ও টোল পরিশোধের সময় ভাংতি না থাকা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের আধিক্য, থ্রি হুইলারসহ ব্যাটারিচালিত গাড়ি ও ইজিবাইক চলাচল বন্ধ না হওয়া, গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশনগুলোয় (মোড়) মোবাইল কোর্টের সংখ্যা কম, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মতো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কোনো ট্রাক
টার্মিনাল না থাকা, মহাসড়কে ট্রাক পার্কিং, ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত মহাসড়কে ডিভাইডার
না থাকা প্রভৃতি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট নিরসনে কয়েকটি সুপারিশ করা হয় বৈঠকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচলের জন্য মহাসড়কটিতে পৃথক লেন নির্মাণ করা। বৈঠকে বলা হয়, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের গতি কম। তাই এ ধরনের লেন নির্মাণ করা হলে ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের কারণে যাত্রীবাহী যানবাহনের চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না। এতে যানজট ও জনদুর্ভোগ অনেক কমে যাবে।
এদিকে মহাসড়কটিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মতো একটি ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের সুপারিশ করা হয়, যাতে যত্রতত্র ট্রাক পার্কিং ও পণ্য ওঠানামা বন্ধ হয়। ওভারলোড ট্রাকগুলোকে মাঝপথ থেকে না ফিরিয়ে উৎসমুখেই আটকানোর সুপারিশ করা হয়। এজন্য পণ্য লোডিং পয়েন্টে ওজন স্কেল স্থাপনেরও সুপারিশ করা হয়। এছাড়া ফৌজদারহাট থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত মহাসড়কে ডিভাইডার নির্মাণ করা হলে ওভারটেকিং বন্ধ হবে। পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি ওজন স্টেশন স্থাপন, টোল বুথের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বুথে যথেষ্ট ভাংতি টাকা রাখার সুপারিশ করা হয়।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শেয়ার বিজকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গুরুত্বপূর্ণ তিন সেতুর পাশে নতুন চার লেনের আরও তিনটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সেতু তিনটির নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস আগেই শেষ হবে। এতে মহাসড়কটিতে যানজট অনেক কমে যাবে। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাতায়াত করা যাবে।
যানজট নিরসনে পৃথক ট্রাক লেন নির্মাণের সুপারিশ
