যানবাহনে এলইডি বাল্বের ব্যবহারে বাড়ছে দুর্ঘটনা

প্রতিনিধি, গাংনী (মেহেরপুর):মেহেরপুরের সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এলইডি বাল্বের সংযোজিত সব ধরনের যানবাহন। সন্ধ্যার পরে এসব যানবাহনের তীব্র আলোয় বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনের চালক ছাড়াও পথচারীদের পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি। বিআরটিএ কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব যানবাহন ও চালকদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি চোখে পড়েনি। ফলে হরহামেশা ঘটছে দুর্ঘটনা। তবে বিআরটিএ ও পুলিশ বলছে, অভিযান চলছে এবং অব্যাহত রয়েছে।

মেহেরপুর জেলার মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়ক-মহাসড়ক ছাড়াও বিভিন্ন জনপদের রাস্তায় চলাচল করে কয়েক হাজার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার বাস, ট্রাক, লরি, লেগুনা, মোটরসাইকেল, ট্রাক্টর, ট্রলি, নসিমন, করিমন, আলমসাধু ও পাখিভ্যান। এসব যানবাহনের অধিকাংশই অবৈধ। আর এই অবৈধ যানসহ বৈধ যানবাহনগুলোও সাধারণ লাইট ব্যবহারের পাশাপাশি রেডিয়াম ও এলইডি লাইট ব্যবহার করছে। এমনকি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যবহƒত গাড়িতেও এসব লাইট ও বিকট শব্দের হর্ন ব্যবহƒত হচ্ছে। চালকরা নিজের পথ দেখে চলাচল করতে গিয়ে অন্যের চলাচলে বিঘœ ঘটাচ্ছেন।

একটি গাড়িতে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যেভাবে হেডলাইট ও অন্যান্য লাইট লাগিয়ে দেয়, এর বাইরে অন্য যে কোনো ধরনের লাইট লাগানো বেআইনি। তাছাড়া যানবাহনে কোনো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এ নিয়ম অনেকেই মেনে চলেন না। দেখা যায়, যে যার ইচ্ছামতো গাড়িতে এলইডি লাইট লাগিয়ে ব্যবহার করছেন। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কঠোর হওয়া প্রয়োজন। এ ধরনের লাইট আমদানি ও বিক্রির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এসব যানবাহন যত্রতত্র দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে এবং মানুষের দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি করছে। তবে বাস ও ট্রাকের মতো বেশি উচ্চতার ভারী যানবাহনগুলোই দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে বেশি। এ অবস্থায় যানবাহনে এলইডি লাইটের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ইজিবাইক চালক গাংনীর কুঞ্জনগরের মিন্টু জানান, ইজিবাইকগুলোয় যে লাইট থাকে, তার পাওয়ার কম এবং ব্যাটারিচালিত এ গাড়িতে যে লাইট থাকে, তা ব্যাটারির চার্জও দ্রুত খেয়ে ফেলে। তাই আলাদাভাবে এলইডি লাইট লাগিয়ে নেয়া হয়। একই  কথা বললেন আনার আলী নামে একজন ভ্যানচালক। তবে এ লাইট ব্যবহারে তাদের এখনও কোনো প্রশাসনিক বাধা কিংবা নিষেধ আসেনি বলে জানান তারা।

ট্রাকচালক শেখ সালাম ও মোটরসাইকেল চালক ব্যবসায়ী আনোয়ার ও হায়দার আলী জানান, সন্ধ্যার পর সড়কে এলইডি লাইট লাগানো ইজিবাইক আর ভ্যানের জন্য চলাচল করা যাচ্ছে না। এ লাইট চোখে লাগলে চোখে কিছুই দেখা যায় না।

এ লাইটের ব্যবহার এভাবে চলতে থাকলে পথচারী ও গাড়ি চালকদের চোখে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেবে। তাই নিজের পথ দেখার জন্য আলাদা করে লাইট লাগানো হয়েছে। তাছাড়া মোটরসাইকেলে এখন কোম্পানি থেকেও এলইডি লাইট সংযোজন করা হচ্ছে। বাড়তি হিসেবে বিভিন্ন ধরনের মিউজিক বাল্ব লাগানোর কথা স্বীকার করেছেন সিংহভাগ মোটরসাইকেল চালক। মেহেরপুরের বিভিন্ন সড়কে সন্ধ্যার পর যতগুলো দুর্ঘটনা ঘটেছে, সবই এসব লাইটের তির্যক আলোক রশ্মির কারণে চোখের দৃষ্টি সাময়িকভাবে নষ্ট হওয়ার কারণে হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্ঘটনার শিকার চালকরা। এসব যানবাহন ও চালকদের বিরুদ্ধেও আজও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ যানবাহন চালকদের।

মেহেরপুর বিআরটির সহকারী পরিচালক জিয়া উদ্দীন জানান, কোনো গাড়িতে নতুন কিছু সংযোজন আইনসিদ্ধ নয়। এ ব্যাপারে বিআরটিএ সজাগ রয়েছে। মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হয়। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না শুধু জনবল সংকটের কারণে বলেও জানালেন তিনি।

মেহেরপুর ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর ফেরদৌস জানান, সব ধরনের গাড়িতেই এলইডি লাইড ব্যবহƒত হচ্ছে। এরই মধ্যে অভিযান চালানো হচ্ছে। অনেক গাড়ির লাইট অপসারণ করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর অভিযান পরিচালনা করা একটু কষ্টসাধ্য। তবে এলইডি লাইট অপসারণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানালেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০