যুক্তরাজ্যের নির্মাণ খাতে বড় পতন

শেয়ার বিজ ডেস্ক: রেকর্ড মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও সদ্যবিদায়ী ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যের বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন (নির্মাণ খাত) কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের পতন হয়েছে। বাড়তে থাকা বাড়ি ভাড়া কমেছে, কমেছে মূল্যস্ফীতি ও গাড়ি বিক্রিও। ফলে জনসাধারণের মধ্যে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার দ্য এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং বৃহত্তর ব্যয়ের চাপের মুখে নতুন নতুন ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় ব্রিটিশ নির্মাণ কার্যক্রম ডিসেম্বরে ২০২০ সালের মে মাসের থেকে দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। খবর: গার্ডিয়ান, রয়টার্স।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা যায়, নির্মাণ খাতের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) সূচক নভেম্বরের ৫০.৪ থেকে কমে ৪৮.৮ পয়েন্ট সূচকে নেমে এসেছে। যা রয়টার্সের অর্থনীতিবিদদের ধারণা ৪৯.৬ থেকেও কম। উল্লেখ্য, পিএমআই সূচক ৫০.০কে স্ট্যান্ডার্ড মনে করা হয়। এর কম হলে ওই খাতে অবস্থা ভঙ্গুর মনে করা হয়।

এ বিষয়ে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের অর্থনীতিবিদ লুইস কুপার বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের নির্মাণ খাত ২০২২ সালে তুলনামূলক দূর্বল হয়ে শেষ হয়েছে’। যেখানে দেশটির গত তিন মাসের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ২০২০ সালের মে মাসের কভিড-১৯ এর প্রারম্ভিক সময়ের চেয়েও খারাপ’। যদিও ২০২২ সালের শুরুর দিকে দেশটির নির্মাণ খাত বেশ শক্ত অবস্থানে ছিল। যেখানে দাপ্তরিক তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর শেষে এক বছর ভিত্তিতে নির্মাণ খাতে ৭.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ডিসেম্বরে সুদহার বাড়িয়ে ৩.৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এদিকে গত মাসে দেশটির  মর্টগেজে ঋণদাতা অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান হ্যালিফ্যাক্স ২০২৩ সালের জন্য ৮ শতাংশ বাড়ি ভাড়া হ্রাসের পূর্ভাবাস দিয়েছে।

এদিকে ডিসেম্বরে ব্রিটিশ বাড়ির দামেও বড় পতন হয়েছে। গতকাল হ্যালিফ্যাক্স এক সমীক্ষায় জানায়, ডিসেম্বরে ১০ বছর আগে মন্দার সময়ের থেকেও বেশি কমেছে বাড়ির দাম। যেখানে হ্যালিফ্যাক্স জানায়, ডিসেম্বর গড়ে ১.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে যুক্তরাজ্যের বাড়ি দামে। এর আগে নভেম্বরেও ২.৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। ফলে টানা চার মাস ব্রিটিশ বাড়ির দাম কমল। আর বছরের চতুর্থ প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তিন মাসে বাড়ির দাম কমেছে ২.৫ শতাংশ, যা ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারির তিন মাসে বড় পতন।

গাড়ি বিক্রি ৩০ বছরে সর্বনি¤œ: এদিকে ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে নতুন গাড়ি রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা কমে ১৬ লাখে দাঁড়িয়েছে, যা ১৯৯২ সালের পর সর্বনি¤œ। যেখানে দামও কমেছে। মূলত বৈশ্বিক চিপ সংকটের কারণে প্রথম ছয় মাসে বিক্রি কমে উল্লেখযোগ্য হারে। তবে ইলেকট্রিক গাড়ির বিক্রি বেড়েছে। এ প্রথম ডিজেলচালিত গাড়ির বিক্রি কম দেখল যুক্তরাজ্যের বাজার। গাড়ি বিক্রিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে টেসলা। প্রথম স্থানে রয়েছে নিসান কাশকাই ও দ্বিতীয় স্থানে ভক্সহল করসা।

সোসাইটি অব মোটর ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স জানিয়েছে, ২০২২ সালে যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন আগের বছরের তুলনায় দুই শতাংশ কম। তবে প্রথম ছয় মাসে গাড়ি বিক্রি কম হলেও বিপরীত চিত্র দেখা গেছে শেষ ছয় মাসে। এ সময় বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। ইউরোপের দ্বিতীয় বড় গাড়ির বাজার যুক্তরাজ্য। প্রথম স্থানে রয়েছে জার্মানি।

ধারণা করা হচ্ছে, মন্দার আশঙ্কা সত্ত্বেও চলতি বছরে দেশটিতে গাড়ি বিক্রির সংখ্যা বাড়বে। এজন্য গাড়িতে চার্জ দেয়ার জন্য নতুন নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।

এদিকে ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈদ্যুতিক গাড়ির বিবর্তনের পথে বড় আকৃতির মডেলগুলোর জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে ২০২২ সাল। গত বছর বিশাল আকার ও দামের বৈদ্যুতিক ট্রাকের চাকা অবশেষে ঘুরতে শুরু করেছে। তবে এর পরের বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালে মাঠ কাঁপাতে পারে অপেক্ষাকৃত হালকা বৈদ্যুতিক এসইউভি (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল)।

নতুন বছরে ২০টির মতো সম্পূর্ণ নতুন মডেলের বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০২২ সালেও এর সংখ্যা মোটামুটি একই ছিল। তবে মানুষ ও পণ্য পরিবহনের জন্য ভালো এবং কম ব্যয়বহুল হওয়ায় ২০২৩ সালে বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোর বেশ কিছু মডেল বাজারে শক্ত অবস্থান করে নিতে পারে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০