শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের সুপারমার্কেটে বছরে দুই লাখ টন খাদ্য নষ্ট হয়। এসব খাবার দুস্থদের মাঝে বিতরণ করতে অনুরোধ জানিয়েছে দাতব্য সংস্থাগুলো। খবর: দ্য গার্ডিয়ান।
খাদ্য বিতরণ দাতব্য সংস্থাগুলোর মতে, বছরে ২ লাখ টন খাদ্য অপচয় হচ্ছে বা উদ্বৃত্ত থাকছে, যুক্তরাজ্যে যা দিয়ে ক্ষুধার্ত পরিবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব। এক্সেস নেটওয়ার্কের আওতায় থাকা বেশ কয়েকটি স্বাধীন দাতব্য সংস্থা জানায়, সুপারমার্কেটের নিজস্ব কিছু নিয়মের কারণে তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ না করে সরাসরি উৎপাদক ও প্রক্রিয়াজাতকারীর কাছ থেকে তারা খাদ্য সংগ্রহ করছেন। এতে তারা বেশ সমস্যার সম্মুখীন হন।
অ্যানথেসিস গ্রুপের গবেষণা অনুযায়ী, সুপারমার্কেটগুলো প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ টন নিজস্ব পণ্য পশুখাদ্য হিসেবে কিংবা শক্তি উৎপাদনের পেছনে ব্যয় করে। তাদের গবেষণায় আরও দেখা গেছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাজ্যের প্রায় ১০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অনাহারে দিন কাটান।
দাতব্য সংস্থা দ্য ব্রেড অ্যান্ড বাটার থিংয়ের প্রধান নির্বাহী মার্ক গেম বলেন, খুচরা বিক্রেতাদের কারণে উৎপাদকরা খাদ্য সরবরাহ করতে বাধার সম্মুখীন হন। কোনো রাখঢাকা ছাড়াই বলা যায়, তারা খাবার দিতে চান না। প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্যের ফুড ক্লাব এই দ্য ব্রেড অ্যান্ড বাটার থিং। তারা প্রায় ২৫ হাজার নিবন্ধিত সদস্যকে বিশেষ ছাড়ে প্রতিদিন খাবার সরবরাহ করে। এ প্রসঙ্গে মার্ক বলেন, প্রতিনিয়ত বাড়ছে চাহিদা। কিন্তু সে অনুযায়ী আমরা জোগান দিতে পারছি না। সুপারমার্কেটের সহায়তা পেলে আমরা পর্যাপ্তসংখ্যক মানুষকে সেবা দিতে পারব।
ল্যানচেস্টারের কমিউনিটি ফুড ক্লাব এগকাপের ম্যানেজার ডেভিড ফ্রান্স বলেন, খুচরা বিক্রেতার অনুমতি ছাড়া খাদ্যের সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। নতুন প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখনও আমরা বৃহৎ সংস্থাগুলোর সঙ্গে গাটছড়া বাঁধতে পারিনি। সুপারমার্কেটের প্রচুর খাবার উদ্বৃত্ত থেকে যায়। তবে এটা ভীষণ কষ্ট দেয় যখন দেখি অনেক খুচরা বিক্রেতা দাতব্য সংস্থাকে এসব খাদ্য না দিয়ে নষ্ট করে ফেলে।
অ্যানথেসিসের গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিবছর যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা তাদের চাহিদার যে খাবার সুপারমার্কেট থেকে কেনেন তার প্রায় অর্ধেকই নিজস্ব ব্র্যান্ডের। ধারণা করা হয়, নাগরিকরা সুপারমার্কেট থেকে কেনা খাবারের ৭২ শতাংশ উদ্বৃত্ত রাখেন। তবে অনেক সরবরাহকারী একাধিক খুচরা বিক্রেতার জন্য নিজস্ব লেবেল ব্যবহার করে। তাই বোঝার উপায় নেই, এই উদ্বৃত্ত খাদ্যের সরবরাহকারী কে বা কারা। তাছাড়া প্রতিটি সুপারমার্কেট থেকে এ-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের উপায়ও নেই।
যুক্তরাজ্য সরকার-সমর্থিত পুনর্ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান র্যাপ জানায়, গত গ্রীষ্মে ও চলতি বছর নতুন করে খুচরা বিক্রেতাদের জন্য গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। তারা সুপারমার্কেটগুলোকে দুটি বৃহৎ দাতব্য সংস্থা ফেয়ারশেয়ার ও কোম্পানিশপকে উদ্বৃত্ত খাবার বিতরণের অনুরোধ জানিয়েছে। গাইডলাইন অনুযায়ী, তারা খুচরা বিক্রেতাদের সরবরাহকারীর তথ্য শেয়ার করার আদেশ দিয়েছে, যাতে যেমন দ্য ব্রেড অ্যান্ড বাটার থিংয়ের মতো ছোট দাতব্য সংস্থার কাছে সরাসরি উদ্বৃত্ত খাদ্য সরবরাহ করা হয়।
সেই থেকে শুধু সেইনজবেরিজ এ আদেশ অনুসরণ করে আসছে। টেসকো ও আসডা তাদের সরবরাহকারীকে নিজস্ব লেবেলযুক্ত উদ্বৃত্ত খাদ্য ছোট দাতব্য সংস্থাকে ফেয়ারশেয়ার ও কোম্পানিশপের মাধ্যমে বিতরণ করার জন্য অনুরোধ করেছে। মরিসন্সও তাদের সরবরাহকারীদের এ-জাতীয় তথ্য দিতে রাজি হয়েছে।
সেইজবেরিজের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্ক গেম। তবে অনেক সরবরাহকারী নষ্ট খাবার আলাদা করে না, কেননা এতে খাবার প্যাকেটজাত কিংবা প্রক্রিয়াজাত করতে অতিরিক্ত অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হয়। তবু ব্যবসায়ীরা দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না করলে খাদ্যের অপচয় রোধ করা যাবে না, এমনকি বিতরণও সম্ভব নয় বলে মনে করেন মার্ক।
ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফ্রুটের অ্যান্ডি মিচেল বলেন, আমরা অনেক সুপারমার্কেটে আপেল ও নাশপাতি সরবরাহ করি। এর কিছু অংশ দেয়া হয় ফেয়ারশেয়ারকেও, তবে তা সংখ্যায় নগণ্য।