Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 11:46 pm

যুক্তরাজ্যে জ্বালানির দাম কমলেও খরচ বাড়ছে

শেয়ার বিজ ডেস্ক:কভিড মহামারির পর ইউক্রেনে রুশ হামলার জেরে বিশ্বব্যাপী জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। ইউরোপ তথা যুক্তরাজ্যে গ্যাসের বড় সরবরাহকারী দেশ হলো রাশিয়া। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়া ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়। ফলে গ্যাসসহ জ্বালানির দাম আরও বেড়ে যায়। তবে গত বছরের এপ্রিল থেকে যুক্তরাজ্যে জ্বালানির দাম কমতে থাকলেও নাগরিকদের ওপর সরকারের প্রণোদনা কমে যাওয়ায় জ্বালানির বিল বেশি দিতে হয়। এতে সাধারণ নাগরিকদের দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হয়। খবর: গার্ডিয়ান। 

জানা যায়, যুক্তরাজ্য সরকার সরবরাহকারীদের জন্য (পাইকারি পর্যায়ে) জ্বালানির দাম গত এপ্রিল থেকে ৯৯৯ পাউন্ড কমিয়ে তিন হাজার ২৮০ পাউন্ডে নির্ধারণ করেছে। তবে আগামী ১ এপ্রিল থেকে সরকারের ভর্তুকি প্রত্যাহার করা হলে গ্রাহকপর্যায়ে এ দাম আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গ্রেট ব্রিটেনের জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘অফগেম’ বলছে, গড়ে দ্বৈত চুলা ব্যবহারকারী পরিবারের জন্য আগামী ১ এপ্রিল থেকে জানুয়ারি-মার্চÑএই তিন মাসের জন্য ২৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে চার হাজার ২৭৯ পাউন্ড খরচ পড়বে। তিনি বলেন, গ্রাহক সরাসরি এ বিল প্রদান করবে না, সরকারের পরিবারপ্রতি ৪০০ পাউন্ড সহায়তা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যেখানে একটি সাধারণ পরিবার দুই হাজার ১০০ পাউন্ড বছরে সাবসিডি পাবে। তবে আগামী ১ এপ্রিল থেকে সরকার এই সাবসিডি হ্রাস করতে যাচ্ছে। ফলে পরিবারগুলোকেই এই বিলের বোঝা বহন করতে হবে।

এদিকে আগামী ১৫ মার্চ যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী জেরোমি হান্ট বার্ষিক বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তার বাজেট পেশ প্রস্তাবে ‘জ্বালানি বিল হ্রাস’ প্রস্তাবটি বাধার সম্মুখীন হবে। কারণ গত বছর দেশটিতে জ্বালানির দাম ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ বিষয়ে অফগেমের প্রধান নির্বাহী জোনাথন ব্রার্লেই বলেন, যদিও পাইকারি পর্যায়ে জ্বালানির দাম কমেছে, কিন্ত ভোক্তা পর্যায়ে কমেনি। এর মানে হল দাম কমলেও সরকারের গ্যারান্টি লেভেলের নিচে নামেনি। অর্থাৎ প্রণোদনা হ্রাসের ফলে আগামী এপ্রিল থেকে জ্বালানির দামও আরও বাড়বে। তিনি বলেন, এটি একটি সাধারণ পরিবারের জন্য ‘গভীর উদ্বেগের’ বিষয়। 

তবে অফগেম মনে করে, জ্বালানি প্রাইস ক্যাপ যতক্ষণ গ্যারান্টি লেভেলে না আসে, ততক্ষন ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব থাকা পর্যন্ত সরবরাহকারীদের দামে সহায়তা দিতে হবে।

এদিকে গ্যাসের পাইকারি পর্যায়ে দাম গত কয়েক মাসে অনেক কমেছে। কিন্তু গ্রাহকরা এখনও ওইসব বিল দিতে পারেননি, কারণ সরবরাহকারীরা কয়েক মাসের গ্যাস আগেই কিনে রেখেছেন।  ফলস্বরূপ, বছরের বাকি কয়েক মাস বিশেষ করে জুলাই থেকে জ্বালানির দাম দুই হাজার ১০০ পাউন্ডে নেমে এলে সরকার আর ভর্তুকি দেবে না, যা ভোক্তার ওপর বর্তাবে।

এ বিষয়ে ভোক্তা ক্যাম্পেইনারর মার্টিন লুইস অর্থমন্ত্রীর কাছে জুলাই পর্যন্ত প্রণোদনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে গ্রাহকরা অন্তত তিন মাস সময় পায়।

লিবারেল ডেমোক্রেট নেতা এড ডেডি বলেছেন, এপ্রিল মাসে জ্বালানি বিল বৃদ্ধি হবে সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, এমনিতে গ্রাহকরা বাড়িভাড়া ও গাড়িভাড়া বৃদ্ধিতে নাজেহাল হয়ে পড়েছে। এরপর যদি এপ্রিল থেকে বাজেটে জ্বালানি প্রণোদনা হ্রাস করে, সাধারণ নাগরিক না খেয়ে মরবে।

দ্য কনসালটেন্সি কর্নওয়াল ইনসাইট বলছে, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী যদি গ্যারান্টি তিন হাজার পাউন্ড বাড়ানো হয়, তবে আগামী অর্থবছরে সরকারকে ২৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন পাউন্ড অতিরিক্ত খরচ করতে হবে।

অফগেম বলছে, আগামী ১ এপ্রিল থেকে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ৭৬ পয়েন্ট থেকে কমে ৫১ পয়েন্টে নেমে  আসবে। আর গ্যাসের ইউনিট খরচ ১৭ থেকে ১৩ পয়েন্টে নেমে আসবে।

এদিকে প্রায় চার মিলিয়ন প্রিপেইড গ্রাহককে বছরে গড়ে অতিরিক্তি ৪৫ পাউন্ড ব্যয় করতে হবে। কারণ জ্বালানি কোম্পানিগুলো অনলাইন পরিষেবার খরচ বৃদ্ধি করেছে।