Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:17 pm

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা ডোনাল্ড ট্রাম্পের

 

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা করছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি বছর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের আগে দেশের অর্থনৈতিক মন্দা ও বিপর্যয়ের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি। খবর: সিএনএন।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করে সিএনএন জানিয়েছে, ট্রাম্পের ডানপন্থি সমর্থকদের প্ল্যাটফর্ম লিন্ডল টিভিতে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের শঙ্কার কথা জানান।

দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে এ বছরের নভেম্বরের দিকে দায়িত্ব গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে তার।

সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, সামনের ১২ মাসের মধ্যে দেশে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটতে পারে, যা আমি চাই না; কারণ আমি প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুভার হতে চাই না।

১৯২৯ সালে হার্বার্ট হুভার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার প্রথম বছরে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে বিপর্যয় হয়েছিল, যা পরববর্তী সময়ে দেশটিকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার দিকে নিয়ে যায়। আসন্ন নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্প অবশ্য নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য বাইডেন প্রশাসনকে দায়ী করে তীব্র আক্রমণ করে আসছেন।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ ৩৪ দশমিক ০১ ট্রিলিয়ন বা ৩৪ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। গত সেপ্টেম্বরে দেশটির জাতীয় ঋণ ৩৩ ট্রিলিয়ন ডলার স্পর্শ করে। একদিকে দেশটির ফেডারেল রাজস্ব কমছে, অন্যদিকে ব্যয় বাড়ছেÑউভয় কারণে দেশটির জাতীয় ঋণ দ্রæত বাড়ছে।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণের সীমা বাড়ানো নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দলের সদস্যদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা হয়। শেষ সময় ছিল ৫ জুন, তার মধ্যে জাতীয় ঋণ নিয়ে ঐকমত্য না হলে খেলাপি হয়ে যেত যুক্তরাষ্ট্র। শেষ পর্যন্ত তার আগেই সাময়িকভাবে জাতীয় ঋণসীমা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত শ্রমবাজার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশটিতে  শ্রমবাজারের নতুন করে চাকরি ও কাজ যোগ হচ্ছে, যা গত বছরে থেমে ছিল বা কমতে শুরু করেছিল। এসব কারণে অনুমান করা হচ্ছিল ভোক্তা ব্যয় কমে যাওয়ায় আগের কয়েক বছরের মতো দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থমকে যাবে। তবে নতুন এ প্রতিবেদনটি অর্থনীতিতে নতুন করে আশা দেখাচ্ছে।

গত শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন ভবিষ্যতের অর্থনীতির বিষয়ে এরকম ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অর্থনীতি নিয়ে অনেক নাগরিক হতাশায় ছিলেন, যা একেবারে অযৌক্তিক প্রমাণিত হয়েছে। এক বছর আগে বেশিরভাগ মানুষ পূর্বাভাস দিয়েছেন আমরা মন্দার মধ্যে পড়ব। এখন স্পষ্ট যে, এটি ঘটেনি। কারণ আমাদের একটি ভালো ও শক্তিশালী শ্রমবাজার রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি নতুন বছরে আঞ্চলিক ব্যাংকিং সংকট, পুঁজিবাজারের সমস্যা, ঋণসীমা-সংক্রান্ত সংকট এবং ভ‚-রাজনৈতিক উত্তেজনা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। গত বছর ওয়াল স্ট্রিটের প্রধান মূল্যসূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সামগ্রিকভাবে বৃদ্ধি পায় ২৪ শতাংশ। ডাও জোনস বৃদ্ধি পায় ১৪ শতাংশ। এই দুই সূচককে ছাপিয়ে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে নাসডাক। এই সূচক বৃদ্ধি পায় ৪৩ শতাংশ। এরপরও ওয়াল স্ট্রিটে মন্দার আশঙ্কা দীর্ঘ হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধ স্থায়ী হলে কিংবা যুদ্ধ আঞ্চলিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়লে এই নির্বাচনের বছরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আবার সংকটে পড়তে বলে সতর্ক করেছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তবে সব শঙ্কা গুঁড়িয়ে দিয়ে জো বাইডেনের শাসনামলের চতুর্থ বছরেও ঊর্ধ্বগতিতে থাকবে ওয়াল স্ট্রিট, এমন আশা পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের। মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রভাব পড়তে পারে ওয়াল স্ট্রিটসহ বিশ্ব পুঁজিবাজারে। বিশেষ করে নানা পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে তেলের মূল্যবৃদ্ধি।