যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমেছে দেড় শতাংশ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইউক্রেনে রুশ হামলার জেরে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে দেশটির ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ব্যয় স্বাভাবিক গতিতে চললেও সার্বিক অর্থনীতি কমেছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এক দশমিক পাঁচ শতাংশ কমে তিন দশমিক এক শতাংশে দাঁড়িয়েছে। খবর: নিউইয়র্ক পোস্ট, আল জাজিরা।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দেশটির ব্যুরো অব ইকোনমিক অ্যানালাইসিস (বিইএ) সংশোধিত ক্রৈমাসিক প্রবৃদ্ধির প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেড় শতাংশ কমেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সংকোচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের এক দশমিক চার শতাংশ হ্রাসের পূর্বাভাসের কয়েক সপ্তাহ পর সর্বশেষ জিডিপি প্রবৃদ্ধি সংশোধন করা হয়। যেখানে পুরো অর্থনীতির ধারক-বাহক পণ্য ও সেবায় প্রবৃদ্ধি হ্রাস পায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ছিল ২০২০ সালের কভিডের প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় প্রান্তিকের পর প্রথমবারের মতো প্রবৃদ্ধি হ্রাস। কারণ ২০২১ সালের শেষ প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি দ্রুত বেড়ে ছয় দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছেছিল।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে আমদানিতে ভোক্তাব্যয় রপ্তানির ব্যয়কে ছাড়িয়েছে গেছে। এজন্য দেশটির অর্থনীতি হ্রাস পেয়েছে, যেখানে বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। তারা বলছেন, বাণিজ্য ঘাটতি না হলে তিন দশমিক দুই শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেশি হতো।

এদিকে যুদ্ধের কারণে প্রথম প্রান্তিকে দেশটির স্টোরহাউস ও গুদামঘরগুলোয় পণ্য সরবরাহ ছিল ধীরগতির, যার কারণে এ প্রান্তিকে দেশটি এক দশমিক এক শতাংশ জিডিপি হারিয়েছে। যদিও বিশ্লেষকরা মূল্যস্ফীতির দ্রæত বৃদ্ধির জন্য অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি এগিয়ে আসছে বলে সতর্ক করেছেন। এপ্রিল শেষে দেশটির ভোক্তামূল্য সূচক (সিপিআই) বেড়ে আট দশমিক তিন শতাংশ দাঁড়িয়েছে।

যদিও গত মাসে দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ‘সমস্যা’ রয়েছে। এজন্য তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার হাফ-পয়েন্ট বাড়ানোর ইঙ্গিত দেন।

যদিও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়ালে বলেছেন, প্রথম প্রান্তিকে অর্থনীতি হতাশার হলেও সামনে শুভ সূচনা হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতির পরিধি বাড়বে।

অন্যদিকে একদল বিশ্লেষক বলছেন, গত প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি কমেছে। তবে এতে মন্দা নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই। বাণিজ্য ঘাটতিতে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি অন্যান্য দেশের তুলনায় দেশটির আমদানি ব্যয় বেড়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এদিকে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, চলতি প্রান্তিকে অর্থাৎ এপ্রিল-জুনে অর্থনীতি সম্ভবত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ জানিয়েছে, বার্ষিক ভিত্তিতে জানুয়ারি থেকে মার্চে অর্থনীতি এক দশমিক পাঁচ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, যা পূর্বাভাসের এক দশমিক চার শতাংশের চেয়ে সামান্য বেশি। ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের পর এটাই দেশটির অর্থনীতির প্রথম সংকোচন। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ২০২১ সালের শেষ প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি ছয় দশমিক ৯ শতাংশ সম্প্রসারিত হয়।

গত ১২ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের গড়ে চার লাখ করে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। দেশটির বেকারত্ব হারও গত ৫০ বছরের সর্বনিন্ম। এরপর দেশটির অর্থনীতি কমেছে।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশটির মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বেড়ে গেছে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়। পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

প্রসঙ্গত, ২৪ ফেব্রæয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে সামারিক অভিযান শুরু করে। এ যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে সারাবিশ্বে। তিন মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও যুদ্ধ থামানোর কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট শুরু হয়ে গেছে। এজন্য রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরকে দায়ী করছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০