Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 10:34 pm

যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির খরচ ১৬০ বিলিয়ন ডলার

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বদলে ফেলা হবে। এ কারণে বিমান বাহিনীর এক কর্মসূচির খরচ ৯৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৫৮০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ১৬০ বিলিয়ন বা প্রায় ১৬ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞাত তিন ব্যক্তি এ তথ্য জানিয়েছেন। এতে দেশটির অন্য গুরুত্বপূর্ণ সামরিক আধুনিকায়নের কর্মসূচিগুলোয় তহবিল কাটছাঁটের হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। খবর: রয়টার্স।

এ প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছে ‘সেন্টিনেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) কর্মসূচি’। এর নকশা করেছে নর্থরপ গ্রামেন করপোরেশন। আর এর পরিচালনায়ও তারাই রয়েছে। এ কর্মসূচির লক্ষ্য পুরোনো হয়ে যাওয়া মিনিটম্যান থ্রি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পাল্টানো।

বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞাত যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা, শিল্পক্ষেত্রের এক নির্বাহী এবং ক্যাপিটল হিলের এক সহকারীর ভাষ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের খরচের হিসাব থেকে এর দাম প্রায় ৬৫০ কোটি ডলার বেড়েছে।

শিল্পক্ষেত্রের দ্বিতীয় আরেকজন নির্বাহী জানিয়েছেন, এটি পেন্টাগনকে কর্মসূচির পরিসর বা সময়সীমা কমিয়ে আনতে বাধ্য করতে পারে। পেন্টাগনের হিসাবে নির্মাণ ও সময়সূচির কিছুটা পরিবর্তনসহ নতুন দাম দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ১০০ কোটি ডলারে, যা গত শুক্রবার একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে বøমবার্গ।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নর্থরপ গ্রামেন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। পেন্টাগনও ওই অঙ্ক নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। কিন্তু তারা বলেছে, তারা খরচের নতুন হিসাব আগামী মঙ্গলবার নাগাদ দিতে পারবে বলে আশা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা যুক্তি দেখাচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক প্রতিরক্ষা বজায় রাখতে সেন্টিনেল কর্মসূচি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারপরও পেন্টাগন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে খরচের হিসাব দিতে বলেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, তাদের দেখা বিভিন্ন নথি থেকে এর মিল দেখা গেছে।

বাড়তে থাকা খরচের এই হিসাব যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর পরবর্তী প্রজšে§র এয়ার ডমিনেন্স ফাইটার জেট কর্মসূচির মতো অন্য অগ্রাধিকারগুলোকে চাপে ফেলছে। পাশাপাশি হাইপারসনিক অস্ত্রের উন্নয়ন, বি-২১ বোমারু বিমান ও বিভিন্ন মহাকাশ কর্মসূচির মতো অন্য উদ্যোগগুলোও সম্ভাব্য ঝুঁকিতে পড়ছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যয় ১৩ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ৯১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে বলে এক প্রাক্কলনে উঠে এসেছে। চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার ওয়েপন্সের (আইসিএএন) হিসাবে এ প্রাক্কলন উঠে এসেছে।

বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ফলে উদ্ভ‚ত ব্যাপক ভ‚রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ফলে শক্তিধর দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বাড়িয়েছে। এর দরুন খরচ বেড়েছে পারমাণবিক অস্ত্রের পেছনেও। বিশ্বের ৯টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশই এ অস্ত্রের পেছনে খরচ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিএএন।

২০২২ সালের তুলনায় গত বছর ১০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার বেশি খরচ করা হয়েছে পারমাণবিক অস্ত্রের পেছনে। ব্যয়বৃদ্ধির পেছনে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি। ২০২৩ সালে পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় করেছে চীন, ১১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। যদিও এ খাতে বেইজিংয়ের মোট ব্যয় ওয়াশিংটনের চেয়ে অনেক কম। যুক্তরাষ্ট্র এ সময় পারমাণবিক অস্ত্রের পেছনে ব্যয় করেছে ৫১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সবচেয়ে বড় পারমাণবিক রাষ্ট্র রয়ে গেছে। পঞ্চাশের দশক থেকেই তারা বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। এই দুটি দেশের কাছেই মোট ওয়ারহেডের প্রায় ৯০ শতাংশ। গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তিন হাজার ৭০৪টি পারমাণবিক ওয়ারহেডের বিপরীতে রাশিয়ার চার হাজার ৩৮০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড মোতায়েন বা মজুত রয়েছে।

আগামী বছরগুলোয় যুক্তরাষ্ট্র বেশিসংখ্যক কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করতে পারে। চীন, রাশিয়াসহ অন্যান্য প্রতিপক্ষ দেশের ক্রমাগত হুমকির কারণে যুক্তরাষ্ট্র এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে গত জুনে জানান দেশটির শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা প্রণয় ভাদ্দি।