শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস স্কুল ডিস্ট্রিক্ট দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম স্কুল ডিস্ট্রিক্ট হিসেবে পরিচিত। চলতি সপ্তাহে এই স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অন্যান্য রাজ্যের স্কুলগুলো স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করছে। ফোন কীভাবে ব্যবহার করলে শিক্ষার্থীদের জন্য ফলপ্রসূ হবে, তা বিবেচনা করছে দেশটির বিদ্যালয়গুলো। খবর: বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল দুটি রাজ্য নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়া এই ইস্যুতে নতুন নীতি বিবেচনা করছে। আশির দশক থেকে শ্রেণিকক্ষে যোগাযোগ ডিভাইস নিষিদ্ধ করার বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা দেখা গেছে। তবে ১৯৯৯ সালে কলোরাডোর কলম্বাইন হাইস্কুলে বন্দুকধারীর গুলিতে ১৩ জন নিহত হওয়ার পর কিছু অভিভাবক ও বিদ্যালয় জরুরি অবস্থার জন্য যোগাযোগের মূল হাতিয়ার হিসেবে ফোনের পুনর্মূল্যায়ন করে। ক্যালিফোর্নিয়াসহ বিভিন্ন রাজ্যে ২০০২ সালে ফোন নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়।
এ সপ্তাহের শুরুতে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম শ্রেণিকক্ষে স্মার্টফোন নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানান এবং একটি নীতি নিয়ে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে কাজ করার কথা বলেন। নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকাল একই ধরনের আইনের পক্ষে মত দিয়েছেন। এই বসন্তে ইন্ডিয়ানার গভর্নর একটি শ্রেণিকক্ষে ফোনের নিষেধাজ্ঞা আইনে স্বাক্ষর করেছেন, যা শরৎকালে বাস্তবায়ন করা হবে। লস অ্যাঞ্জেলেসের বোর্ড সদস্যরা আগামী বছর থেকে ডিভাইসগুলো নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দেন। তবে নীতিটি কীভাবে কাজ করবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বিদ্যালয়গুলোয় স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ে পুলিশি বিতর্ক এবং মহামারি-পরবর্তী সময়ে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের প্রবণতার মধ্যে এই প্রচেষ্টা সফল করার কথা ভাবছেন তারা।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ বিদ্যালয়েই এক ধরনের ফোন পলিসি বা নীতি রয়েছে। দেশটির শিক্ষা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৭৬ শতাংশ বিদ্যালয় তাদের নন-একাডেমিক (শিক্ষাক্রম বহির্ভূত) ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। তবে সর্বশেষ বিধিনিষেধ একে আরও এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষিকা রাফায়েলা হজেস বলেছেন, তিনি শিশুদের সামাজিকীকরণে উদ্বেগজনক ও নাটকীয় পরিবর্তন দেখেছেন। তিনি বলেন, যখন তারা অস্বস্তি বোধ করে, তখনই তারা ফোন ধরে।
বিদ্যালয়ে ফোনের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে একমত হয়েছেন ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেট ও বিরোধী রিপাবলিকান আইপ্রণেতারা।
ফ্লোরিডা গত বছর একটি আইন প্রয়োগ করেছে, যেখানে বিদ্যালয়গুলোকে শ্রেণিকক্ষ থেকে ফোন নিষিদ্ধ করতে এবং স্কুলের ওয়াই-ফাই ব্যবহার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশাধিকার বন্ধ করতে হবে। আইনটিতে বিদ্যালয়গুলোকে বিভিন্ন মাধ্যমে সামাজিক, মানসিক ও শারীরিক প্রভাব সম্পর্কে নির্দেশনা সরবরাহ করার কথাও উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।
অন্টারিও ও অ্যালবার্টাসহ কানাডার প্রদেশগুলোর মতো মেইন ও ভার্জিনিয়াসহ রাজ্যগুলোর পৃথক ডিসট্রিক্টগুলোও ফোন ব্যবহারের বিষয়ে কঠোর নিয়ম প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। বিশেষজ্ঞরা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করার পরপর নীতিগুলো সামনে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিবেক মূর্তি গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় সিগারেটের বক্সের মতো সতর্কতা লেবেল দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সার্জন জেনারেল বিবেক মূর্তি যুক্তি দিয়েছিলেন, সামাজিক মাধ্যম শিশুদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশার লক্ষণগুলো অনুভব করার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। যদিও এ বিষয়ে মিশ্র গবেষণা রয়েছে।
বিবেক মূর্তি বলেন, আপনার অবস্থা এমন একপর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে বাচ্চারা শুধু শেখার চেষ্টাই করছে না, তারা একই সঙ্গে তাদের ফোনে কথা বলছে, তারা তাদের বন্ধুদের বার্তা পাঠাচ্ছে, তারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বার্তার উত্তর দিচ্ছে, তারা তাদের ফিড স্ক্রল করছে। এটি কেবল শেখার প্রচেষ্টাকেই কঠিন করে তোলে না, এটি বিদ্যালয়ে সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব গড়ে তোলাকেও কঠিন করে তোলে।
২০১৯ সালে প্রকাশিত ও ফেডারেল হেলথ অফিসের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কিশোর-কিশোরীরা সামাজিক মাধ্যমে দিনে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় করে। ফলে তারা উদ্বেগ ও হতাশার মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার দ্বিগুণ ঝুঁকির মুখোমুখি হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যালয়গুলো ঐতিহাসিকভাবে সুরক্ষা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাইরেন কলকে সীমাবদ্ধ করার মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে পেতে লড়াই করছে। ন্যাশনাল স্কুল সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিসেসের প্রেসিডেন্ট কেন ট্রাম্প বলেন, কমিউনিটির দৃঢ় ঐকমত্য ও প্রয়োগের ধারাবাহিকতা ছাড়া নীতিমালা কাজ করবে না।