যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাব্যয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন

শেয়ার বিজ ডেস্ক: আমাজনের প্রধান হিসাবরক্ষক ব্রায়ান ওলসাভস্কি বিশ্বখ্যাত সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমাদের এখন অনেক জায়গা রয়েছে। কভিড-১৯ মহামারিতে এই অনলাইন খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটির চাহিদা বেড়ে যায়। সেই ব্যবসাসফল অবস্থান থেকে দ্বিগুণ করা হয়েছে পরিসর। ২০১৯ সালের শেষের দিকের তুলনায় গত দুই বছরে এর কলেবর বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, বর্তমানে দিনে কোটি ডলারের বেশি অর্থ উপার্জন করে আমাজন।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড সুদহার বাড়ানোর কথা ঘোষণা করার পর খুচরা বিক্রেতারা নিজেদের কার্যক্রম কিছুটা কমিয়ে আনা বা মন্দার আশঙ্কা করছেন। এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য তারা প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। তবে আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সমস্যায় পড়লে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পণ্য সরবরাহ না হলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে, এতে ফেডের প্রত্যাশা (সুদহার বৃদ্ধি) পূরণ হবে।

খুচরা বিক্রেতা টার্গেট এক প্রতিবেদনে জানায়, চলতি বছর প্রথম তিন মাসে এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তাদের আয় কমেছে ৫২ শতাংশ। তাদের আসবাব, টেলিভিশন ও যন্ত্রপাতির চাহিদা তুলনামূলকভাবে কমে আসে বছরের প্রান্তিকে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ব্রায়ান কর্নেল বলেন, আশা করি ক্রেতারা পণ্য ও পরিষেবা থেকে তাদের ব্যয় কমিয়ে আনবেন। তবে সেই পরিবর্তন যে রাতারাতি হয়ে যাবে, এমন আশা করি না।

কভিড-১৯ মহামারির সবচেয়ে বাজে সময় কাটিয়ে ওঠার পর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা ফের যন্ত্রপাতি, গাড়ি ও আসবাব কেনাকাটায় ঝুঁকেছেন। তাদের ব্যয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এই ধারা শুরু হয় গত বছর। ২০২১ সালে মহামারির ক্ষত কাটিয়ে উঠতে অর্থনীতিতে বিপুল পরিমাণ প্রণোদনা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি দ্রæত গতিতে চলে কভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম। শিথিল করা হয় নানা বিধিনিষেধ। ফলে দেশটিতে গতি ফেরে গ্রাহকব্যয় ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে। সব মিলিয়ে গত বছর প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দৃঢ়ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। তখন বিশ্বের বৃহত্তম এ অর্থনীতি প্রাক-কভিড স্তরে ফেরার ইঙ্গিতও দেয়। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কর্মক্ষমতার প্রত্যাশা করা হয় তখন। চলতি বছর এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। প্রয়োজনীয় নয় এমন পণ্য বা সেবার বিকল্পও কিনতে শুরু করে জনসাধারণ। যেমন ব্যায়ামাগারের জন্য সাইকেল কেনা, কিংবা অতিরিক্ত নগদ অর্থ দিয়ে ঘড়ি বা অন্য দামি পণ্য কিনছে তারা। মহামারির এই এক বছরে ভোক্তার কেনাকাটায় নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। ২০২১ সালের বসন্তে গৃহস্থালি পণ্য কেনায় খরচ বাড়ে ৪২ শতাংশ, মহামারি-পূর্ব সময়ে যা ছিল ৩৬ শতাংশ। তবে এ সময় সেবা খাতের ক্রয় কমে ৫৮ শতাংশ, যা আগে ছিল ৬৪ শতাংশ। এতে বছরে প্রায় ৯০ হাজার কোটি ডলার রাজস্ব কমে।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্য অনেক পশ্চিমা দেশও একই ধরনের ভোক্তাব্যয় দেখছে। কয়েকটি দেশে ব্যয়ের মাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বেড়েছে। গোল্ডম্যান স্যাকসের ড্যান স্ট্র–ভেন ও ড্যান মিলো জানান, ওইসিডিভুক্ত ২৩টি দেশের ভোক্তা আচরণ তুলনা করে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের তুলনায় বেশি ব্যয় করেছে নরওয়ে ও চিলির ভোক্তারা। গত তিন মাসে জাপানে ব্যক্তিগত খরচ ও পণ্য কেনা কমেছে সাত শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের ব্যক্তিগত খরচ ও পণ্য কেনার হার দেশটির অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করছে। তবে মূল্যস্ফীতি ভাবিয়ে তুলছে অর্থনীতিবিদদের। দেশটির শ্রম দপ্তর জানায়, পণ্য ক্রয়হার কভিডপূর্ব সময়ের মতো ৯ শতাংশ বেড়েছে। সেবা খাতে এ হার সাত শতাংশ। এমনকি অনেক সেবা দ্রæতগতিতে বাড়ছে। স্ট্র–ভেন ও মিলো জানান, বিনোদন ক্যাটেগরির চাহিদা বেড়েছে। খাদ্য, উড়োজাহাজ ভ্রমণ, হোটেলে অবস্থান প্রভৃতি গত দুই বছরের তুলনায় বেড়েছে। তবে লন্ড্রি ও ডাই-ক্লিনিং থেকে রাজস্ব আয় কমেছে ২০ শতাংশ। অলংকার ও যানবাহন কেনা বেড়েছে যথাক্রমে ৫৩ ও ৪৩ শতাংশ। পোষা প্রাণীর যতেœ ব্যয় বেড়েছে ২৩ শতাংশ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০