শেয়ার বিজ ডেস্ক: উদীয়মান চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় বেশ কিছুদিন ধরেই একটু একটু করে গতি হারাচ্ছিল বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে অবকাঠামো খাতের প্রতিযোগিতায় চীনের সঙ্গে তাল মেলাতে খেই হারিয়ে ফেলছিল দেশটি।
এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে নতুন করে ঢেলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এর অংশ হিসেবেই শুক্রবার মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রের অবকাঠামো খাতে এক দশমিক দুই ট্রিলিয়ন ডলার বা এক লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার খরচের ঐতিহাসিক একটি প্রস্তাব পাস হলো মার্কিন কংগ্রেসে।
মার্কিন কংগ্রেসের নিন্ম কক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টিটিভে ২২৮-২০৬ ভোটে পাস হয় বিলটি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসে অবকাঠামো খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সদ্য পাস হওয়া এই বিলে।
বিলটি পাসের পর এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, এখন থেকে পরবর্তী প্রজন্ম এই দিনটির দিকে ফিরে তাকাবে এবং জানবে যে এটাই সেই মুহূর্ত যখন আমেরিকা একবিংশ শতাব্দীর অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করেছিল।
তবে বিলটি পাসের ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত ছিল খোদ ডেমোক্র্যাট শিবিরই। দলের উদারপন্থি ও বামপন্থি হিসেবে পরিচিত ছয়জন সদস্য এর বিপক্ষে ভোট দেন। অপরদিকে বিলের পক্ষে যোগ দেন রিপাবলিকান দলের ১৩ জন সদস্য।
কংগ্রেসের উভয় কক্ষেই ডেমোক্র্যাটরা খুবই অল্প ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে নিজের দলের সদস্যদের বিরোধিতার কারণে বিলটি পাস করতে তাদের নির্ভর করতে হয় বিরোধী রিপাবলিকান দলের সদস্যদের সমর্থনের ওপরে।
ডেমোক্র্যাট দলের বামপন্থি বা উদারপন্থি বলে পরিচিত বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা বিলটি পাসের ব্যাপারে নিজেদের আরোপ করা শর্তের ব্যাপারে অনড় থাকায় এতদিন ঝুলে ছিল ভোটাভুটি।
অবকাঠামো খাতে খরচের এই বিলটি পাসের শর্ত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর এক দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন বা এক লাখ ৭৫ হাজার কোটি ডলার বরাদ্দের অপর একটি বিল একই সঙ্গে পাসের দাবিতে অনড় থাকেন তারা। তবে তাদের আপত্তিকে অগ্রাহ্য করেই শুক্রবার চূড়ান্ত ভোটাভুটিতে যায় বিলটি।
এদিকে সামাজিক খাতে ব্যয়ের বিলটি কংগ্রেসে ভোটাভুটির জন্য উত্থাপন হতে আরও সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগবে। তবে দলের ডানপন্থি সদস্যরা বিলটির আকার এবং অর্থনীতির ওপর এর প্রভাবকে আরও ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে না দেখে বিলটি পাসের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে আসছে। অবশ্য ডেমোক্র্যাট দলের নেতারা চলতি নভেম্বরের মধ্যেই বিলটি পাসের ব্যাপারে আশাবাদী।
শুক্রবার রাতে অবকাঠামো খাতে বিলটি পাসের পর এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা চলে গেছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ডেস্কে। তিনি সই করলেই কার্যকর হওয়া শুরু করবে বিলটি।
বিলের অংশ হিসেবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, গণপরিবহন, রেলওয়ে, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও নদী বন্দরগুলোর সংস্কার উন্নয়নে খরচ করা হবে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি ইন্টারনেট খাতেও বিপুল পরিমাণ খরচের প্রস্তাব রাখা হয়েছে এই বিলে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের অবকাঠামো উন্নয়নে খরচ করা হবে ৬৫ বিলিয়ন ডলার। দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নেও খরচ করা হবে বহু বিলিয়ন ডলার। এছাড়া বিলটিতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার বিষয়টিতেও। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য চার্জিং পয়েন্ট স্থাপনের অবকাঠামো নির্মাণে খরচ করা হবে সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার।
এদিকে শুক্রবার মধ্যরাতে বিলটি পাসের পরপরই মার্কিন কংগ্রেসের নি¤œপক্ষের স্পিকার ন্যান্সি প্যালোসিকে ফোন করে অভিনন্দন জানান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বিলটিকে কেন্দ্র করে ডেমোক্র্যাট শিবির দ্বিধাবিভক্ত থাকলেও শুরু থেকেই ন্যান্সি পেলোসি বিলটিকে সমর্থন জানিয়ে আসছিলেন।
