যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর চেষ্টায় মরিয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীরা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপদ আশ্রয় ও সুযোগের সন্ধান করা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য সান দিয়েগো-মেক্সিকো সীমান্তটি ব্যস্ততম সাম্প্রতিক মাসগুলোয় একটি ক্রসিং জোন হয়ে উঠেছে। সীমানাপ্রাচীর অতিক্রম করে আসা এবং তাঁবুতে আশ্রয় নেয়া অভিবাসী পরিবারগুলো বেশিরভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বর্ডার পেট্রোল কর্মকর্তাদের হাতে ধরা পড়েন। সান দিয়েগো কাউন্টির এই প্রত্যন্ত মরুভূমিতে ছোট শিশুরাও এই বিপদসংকুল অভিযানে তাদের পরিবারের সঙ্গে থাকে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সীমান্ত অতিক্রমের বিষয়টি গত বছরের নভেম্বরে আবার নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাইডেনের অভিবাসন নীতির সমালোচনা করার জন্য এতে যথেষ্ট রসদও পেয়ে গেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা।

এ প্রসঙ্গে বাইডেন প্রশাসন বলছে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সীমান্ত অতিক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে সীমান্তে ব্যাপক হারে অবৈধ অভিবাসীদের আটক করা হচ্ছে। তবে কোনো সঙ্গী বা পরিবারের সদস্য ছাড়াই সীমান্ত অতিক্রম করা শিশু ও গুরুতর চিকিৎসা-সংক্রান্ত বা নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকা বা পাচারের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ওপর কড়াকড়ি আরোপের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে।

বাইডেন প্রশাসন আশা করছে, চলতি সপ্তাহে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আশ্রয় প্রার্থনার সুযোগ বাতিল করে দেয়ার পরপর সীমান্ত অতিক্রম করা অভিবাসীদের সংখ্যা কমে আসবে।

ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের তথ্যে দেখা যায়, গত এপ্রিলে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রমের কারণে আটক হওয়া ব্যক্তিদের প্রায় ৩০ শতাংশ সান দিয়েগো অঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। ফলে গত বছরের অক্টোবরে শুরু হওয়া এই অর্থবছরে ১ দশমিক ১৬ মিলিয়নের বেশি অভিবাসী সীমান্ত অতিক্রম করে দেশটিতে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সীমান্ত পেরিয়ে আসা কলম্বিয়ান অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বেশিরভাগ বলছেন, তাদের দেশ অনিরাপদ হয়ে গেছে এবং তারা সেখানে তাদের জীবননাশের হুমকিও পেয়েছেন। এডওয়ার্ড নামের ৩৫ বছর বয়সী এক কলম্বিয়ান বলেন, সেখানে আমার জীবন ঝুঁকিতে ছিল। পেশায় শিক্ষক এডওয়ার্ড আরও বলেন, আমরা যেখানে থাকতাম সেখাসে অনেক নিরাপত্তাহীনতা ছিল। দুঃখজনকভাবে ফেব্রুয়ারি থেকে, তারা আমাদের হুমকি দিতে শুরু করে এবং আমরা এখানে আসার সিদ্ধান্ত নেই।

এডওয়ার্ড তার স্ত্রী লুসা ও তাদের ১১ মাস বয়সী মেয়ে শিশুকে নিয়ে সীমান্তে এসেছেন। তিনি আশা করছেন, তার পরিবারকে নিয়ে তিনি নিউইয়র্ক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবেন। এডওয়ার্ড বলেন, এত ছোট একটি শিশুকে নিয়ে ভ্রমণ করায় আমরা চিন্তিত। তবে আমরা যে পরিস্থিতিতে ছিলাম, সেটা নিয়েও আমাদের ভাবতে হয়েছে।

মূলত সীমান্ত বেষ্টনীর যেখানে ছিদ্র রয়েছে, সেখান দিয়েই অভিবাসীদের দলগুলো সীমান্ত অতিক্রম করে পাহাড়ি ও পাথুরে এলাকায় প্রবেশ করছে। তারা সীমান্ত বেষ্টনীর চারপাশে এমন জায়গাগুলোয় ঘোরাঘুরি করেন, যেখানে তারা বর্ডার পেট্রোল সদস্যদের নজরে পড়বেন।

সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী কালি কাই ব্রাউন নামের একজন প্রোপার্টি ম্যানেজার জানিয়েছেন, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বড় দলগুলো রাতে সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে। কয়েক দিন আগে রাত ১টায় ৭০ থেকে ১০০ অভিবাসীর একটি দলকে সীমান্ত পাড়ি দিতে দেখেছেন বলে তিনি জানান।

ব্রাউন জানান, অভিবাসীর দলটি তার জমির মধ্যে প্রবেশ করেছেন কি না, তা পাহারা দিতে তিনি রাতে জেগে ছিলেন। তিনি বলেন, গত বছর আমি যা দেখেছি তা সত্যিই অবিশ্বাস্য।

সীমান্ত অতিক্রমের পর অভিবাসীদের বেশিরভাগই প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে থাকেন। এক সময় তারা বর্ডার পেট্রোল এজেন্টদের নজরে পড়েন এবং পরবর্তীকালে তাদের নথিপত্র ও মুখমণ্ডলের ছবি নেয়ার পর বাসে করে তাদের প্রসেসিং সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অপেক্ষারত অভিবাসীদের অনেক সময় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা সহায়তা করেন। এমন একজন হলেন স্থানীয় বাসিন্দা ক্যারেন পার্কার। তিনি প্রায়ই সীমান্তে অপেক্ষারত অভিবাসীদের জন্য পানি, হালকা খাবার ও চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে যান। তিনি জানিয়েছেন, এক বছর আগে সন্তান হারানো এক অভিবাসী নারীকে নিজের বাড়ির সামনে বিলাপ করতে শোনার পর থেকেই তিনি অভিবাসীদের সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নেন।

পার্কার বলেন, আমি যখন তার সন্তানদেরকে খুঁজতে যাই, তখন আমি বিভিন্ন দেশের ১ হাজার মানুষকে দেখতে পাই। তিনি তার সন্তানদের খুঁজে পেয়েছিলেন, কারণ এটি একটি ছোট শহর।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০