শেয়ার বিজ ডেস্ক: কার্বন নির্গমন কমাতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে উন্নত দেশগুলো। সদ্যসমাপ্ত স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় জাতিসংঘের জলবায়ু-বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন ‘কপ২৬’-এ যুক্তরাষ্ট্রও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ২০৪০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনবে। এ লক্ষ্যে দেশটিতে পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ উপৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি করছে। ফলে এ খাতে রাজস্বও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্লেষকদের ভাষ্য, কপ-২৬ সম্মেলন-পরবর্তী দশক হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সৌর খাতের আশাব্যঞ্জক দৃষ্টিভঙ্গি। খবর: ব্ল–মবার্গ, ইয়াহু ফাইন্যান্স।
সম্প্রতি তেল-গ্যাসসহ জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি সরবরাহ কোম্পানিগুলোকে বিকল্প জ্বালানি উৎস খুঁজতে বাধ্য করা হয়। ২০২০ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সৌরশক্তির চাহিদা আশাব্যঞ্জকভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে সৌরশক্তির কোম্পানির গ্রাহক বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ কারণে সৌর কোম্পানিগুলো ইতিবাচক মুনাফা দেখাচ্ছে। পরবর্তী দশককে যুক্তরাষ্ট্রের সৌরশক্তির দশকও বলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক শীর্ষ সৌলার কোম্পানি সানরান গত সপ্তাহে ঘোষণা করেছে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় তাদের দ্বিগুণ মুনাফা অর্জিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এ সৌরশক্তি কোম্পানিটির গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ছয় লাখ ৩০ হাজার অতিক্রম করেছে, যেখানে অর্থনীতিবিদদের ধারণারও বেশি ৪৩৯ মিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের ধারণা ছিল তৃতীয় প্রান্তিকে ৪১৪ মিলিয়ন ডলার আয় হবে।
২০২০ সালের জুলাই মাসে ভিডিন্ট সোলার কোম্পানিকে অধিভুক্ত করার পর বর্তমানে সানরান দেশটির বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ বিতরণের শীর্ষ কোম্পানিতে পরিণত হয়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য সোলার জায়ান্ট সানপাওয়ার্সের তৃতীয় প্রান্তিকে রাজস্ব প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা কমে ৩২৪ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। কোম্পানিটির তৃতীয় প্রান্তিকের প্রত্যাশা ছিল ৩৩৩ মিলিয়ন ডলারের। যদিও মাত্র ৯ শতাংশ কম হয়েছে রাজস্ব। তবে কোম্পানিটি পুনর্গঠনের কাজ করছে বলে জানিয়েছে। সানপাওয়ার গত এক বছরে তাদের ২৯ শতাংশ গ্রাহক বৃদ্ধি করে তিন লাখ ৯০ হাজার আবাসিক গ্রাহক ধরে রেখেছে।
গত অক্টোবর মাসেই সানপাওয়ার ঘোষণা করেছে যে, নভেম্বরে সোলার কোম্পানি ব্ল– রেভেনকে ১৪৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে অধিগ্রহণ করে আবাসিক বাসাবাড়িতে বৃহত্তর পরিসরে সৌরসংযোগ দিতে মনোনিবেশ করবে। কোম্পানিটি এখন একজন ক্রেতা খুঁজছে, যিনি শিল্প ও বাণিজ্য এলাকায় ব্ল– রেভেনের ২০ হাজার গ্রাহককে সেবা দিতে পারবে। এটি পাওয়া গেলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সানপাওয়ারের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ হবে বলে মনে করা হয়।
এ বিষয়ে সানপাওয়ারের সিইও পিটার ফ্যারিসি বাণিজ্যিক ব্যবসা থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে বলেন, আবাসিক ব্যবসাটা হলো বড়, এটি দ্রুত বর্ধনশীল এবং বেশি মুনাফাজনক। তিনি আরও যোগ করে বলেন, আমাদের জন্য (আবাসিক) জায়গাটা সঠিক। আমরা আশা করছি বিনিয়োগকারীরা ভালোভাবে গ্রহণ করবে।
২০২০ সালের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের কেবল তিন শতাংশ বাড়িতে সৌর প্যানেল চালু করা হয়েছে, যার সংখ্যা দুই দশমিক সাত মিলিয়ন। দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বের হয়ে নরবায়নযোগ্য জ্বালানিতে (সৌরবিদ্যুৎ) অগ্রাধিকার দেয়ায় বর্তমানে তা অনেকগুণ বেড়েছে। ফলে বেশ কয়েকটি গবেষণা-পরবর্তী দশককে সোলার শক্তি বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের সোলার ফিউচার স্টাডি (এসএফএস) জাতীয় পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে ৪০ শতাংশ সোলার শক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
অন্য একটি আশার বাণী হলো সম্প্রতি ন্যাচার কমিউনিকেশনের এক প্রতিবেদন বলছে, আগামী দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যুতের চাহিদার ৮০ শতাংশ পূরণ করা হবে সৌরশক্তির দ্বারা।
যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত বাড়ছে সোলার মার্কেট। তবে কভিডের কারণে শ্রমিক সংকট এবং সরবরাহ বিঘœ হওয়ায় কাজে ধীরগতি লক্ষ করা যায়। সংশ্লিষ্টদের আশা, ২০২২ সাল নাগাদ সোলার প্যানেল ইনস্টল করা সম্ভব হবে। তবে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা এ খাতে বিনিয়েগে এগিয়ে আসছে, যেখানে সরকারও উৎসাহ দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, ২০২২ সালের মধ্যে গ্রাহকরা ২৬ শতাংশ ট্যাক্স ক্রেডিট গ্রহণ করবে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সৌর খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে দুটি কোম্পানি সানরান ও সানপাওয়ার। এছাড়া বেশ কয়েকটি কোম্পানি সৌরশক্তিতে বিনিয়োগ করছে।