Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 9:47 pm

যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব কমেছে

শেয়ার বিজ ডেস্ক:ফেব্রুয়ারিতে রেকর্ড কর্মসংস্থান হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এ সময় দেশটির চাকরির বাজারে ৬ লাখ ৭৮ হাজার পদ সৃষ্টি হয়েছে, যা মাসের হিসাবে গত বছরের জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ। বেকারত্বের হার কমেছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এ অবস্থাকে মহামারি-পূর্ব অবস্থার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। খবর: সিএনবিসি।

যুক্তরাষ্ট্রের লেবার ডিপার্টমেন্টের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর বরাত দিয়ে সিএনবিসি জানায়, গত মাসে নন-ফার্ম পে-রোল বেড়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার। একই সময় বেতনভুক্ত পদের সংখ্যা বেড়েছে ৪ লাখ ৪০ হাজার এবং বেকারত্ব কমেছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।

প্রসঙ্গত নামে নন-ফার্ম হলেও শুধু কৃষি নয়, সরকারি কর্মচারী, পরিবারের ব্যক্তিগত কর্মচারী ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীদের বাদ দিয়ে শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার প্রকাশ করে আগের মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির সংখ্যা। এ সময় দেখা হয় চাকরির সংখ্যা আগের থেকে বাড়ল না কমল। একই সঙ্গে বাড়া ও কমার সংখ্যাও উল্লেখ করা হয়। যেহেতু কৃষি খাত বাদ দিয়েই এই হিসাবটা করা হয়, তাই এর নাম হয়েছে নন-ফার্ম পে-রোল।

মূল্যস্ফীতি কমার লক্ষণ দেখা গেলেও মজুরি বাড়েনি গত মাসে। ঘণ্টাপ্রতি মাত্র ১ সেন্ট বা শূন্য দশমিক শূন্য তিন শতাংশ বেড়েছে। যদিও পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ার। বৃহৎ অর্থে চাকরির বাজার মহামারির আগের অবস্থায় গেছে, তবে এখনও ১৪ লাখ পদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। এছাড়া দক্ষ কর্মীরও অভাব রয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ পদ পূরণের জন্য যথেস্ট শ্রমশক্তি নেই। কর্মসংস্থানের দৃষ্টিকোণ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কভিড-১৯-এর নতুন ধরন ওমিক্রন শ্রমবাজারে তেমন নেতিবাচক প্রভাবে ফেলতে পারেনি।

চাকরির পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান গ্লাসডোরের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ডেনিয়েল ঝাও বলেন, এই প্রতিবেদনটি বেশ আশাব্যঞ্জক। আমাদের চাকরির বাজার সঠিক পথে রয়েছে। গত ১০ মাস ধরে চার লাখের ওপর বাড়ছে কর্মসংস্থান। সিটিজেনস ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরিক মেরলিস বলেন, অনেক নাগরিক কাজে ফিরছেন বলেই শ্রমবাজার চাঙা হয়ে উঠেছে। ভূরাজনৈতিক ইস্যু ও মূল্যস্ফীতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাধা হলেও কভিড বিধিনিষেধ তুলে দেয়ায় আমরা চাকরির বাজারে প্রবৃদ্ধি আশা করছি। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা চিন্তায় রয়েছেন। যুদ্ধের কারণে টানা কয়েকদিন পুঁজিবাজারে পতন দেখা গেছে।

ফেব্রুয়ারিতে আতিথেয়তা খাতে সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান হয়েছে। এ খাতে ১ লাখ ৭৯ হাজার পদ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের বিধিনিষেধের কারণে এ খাতে অনেক পদ খালি রয়েছে। এ খাতে বেকারত্বের হার ৬ দশমিক ৬ শতাংশ, যা জানুয়ারির চেয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। মজুরিও সামান্য কমেছেÑদুই সেন্ট কমে ঘণ্টাপ্রতি মজুরি দাঁড়িয়েছে ১৯ ডলার ৩৫ সেন্টে। তবে বার, রেস্টুরেন্ট, হোটেল ও অন্যান্য সমজাতীয় ব্যবসা বেড়ে যাওয়ায় মজুরি ধীরগতিতে বাড়ছে।

চার্লস শুয়াবের প্রধান কৌশলবিদ ক্যাথি জোনস বলেন, শ্রমিকের অংশগ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় আমরা মহামারি-পূর্ব সময়ে ফিরে যেতে পারছি। চাকরির বাজার এখনও শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সঠিক পথে রয়েছি আমরা। অনেক মানুষ যেহেতু কাজে ফিরে এসেছেন এবং তা বেড়েই চলেছে, তাই মজুরিও বাড়বে।

অন্য খাতগুলোর মধ্যে পেশাদার ও বাণিজ্য সেবায় ৯৫ হাজার, স্বাস্থ্যসেবা খাতে ৬৪ হাজার, নির্মাণে ৬০ হাজার, পরিবহন ও গুদামে ৪৮ হাজার এবং খুচরা খাতে ৩৭ হাজার পদ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া উৎপাদন ও আর্থিক খাতে যথাক্রমে ৩৬ হাজার ও ৩৫ হাজার পদে কর্মসংস্থান হয়েছে।

বছরটি আশাব্যঞ্জক বলে মনে করেন চাকরির সন্ধানদাতা প্রতিষ্ঠান ইনডিডের ইকোনোমিক রিসার্চ ডিরেক্টর নিক বাঙ্কার। এই অনিশ্চিত সময়ে আগেভাগে কিছু বলাটা মুশকিল হলেও যে হারে কর্মসংস্থান হচ্ছে তাতে এই গ্রীষ্মেই মহামারি-পূর্ব অবস্থানে ফিরে যাব আমরা।