শেয়ার বিজ ডেস্ক: চলতি বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব কমে চার দশমিক ছয় শতাংশে পৌঁছেছে। ৯ বছরের মধ্যে দেশটির বেকারত্বের এ হার সর্বনি¤œ। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে এক লাখ ৭৮ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। চাকরির বাজারের ইতিবাচক এ তথ্য ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদহার বাড়ানোর সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। খবর রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগের তথ্যমতে, অক্টোবরে দেশটিতে বেকারত্বের হার ছিল চার দশমিক ৯ শতাংশ। নভেম্বরে বেকারত্ব কমে চার দশমিক ছয় শতাংশ হয়েছে। ২০০৭ সালের আগস্টের পর যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার এটাই সর্বনি¤œ। নভেম্বরে নতুন চাকরি পেয়েছে এক লাখ ৭৮ হাজার মানুষ। আগের মাসে নতুন চাকরি পেয়েছিল এক লাখ ৪২ হাজার। চাকরিপ্রত্যাশী বেড়ে যাওয়া এবং চাকরির বয়সসীমা কমানোয় অবসরের সংখ্যা বেড়ে গেছে। ফলে নতুন চাকরির সুযোগ হচ্ছে।
গত মাসে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, নভেম্বরে এক লাখ ৭৫ হাজার নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর বেকারত্বের হার চার দশমিক ৯ শতাংশে স্থির থাকবে। অর্থাৎ প্রত্যাশার তুলনায় কর্মসংস্থান বেশি হারে বাড়লো।
লন্ডনভিক্তিক ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবাদাতা কোম্পানি বারক্লেস’র নিউইয়র্কের প্রধান অর্থনীতিবিদ মাইকেল গ্যাপেন বলেন, ‘বেকারত্ব কমে যাওয়া এবং শ্রমবাজারের ইতিবাচক খবর মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলবে। ফলে ডিসেম্বরে সুদহার বাড়ানোর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেল।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরির বাজারে ইতিবাচক প্রবণতা থাকলেও মজুরি কিছুটা কমেছে। তথ্যমতে, গড়ে ঘণ্টাপ্রতি মজুরি তিন সেন্ট বা দশমিক এক শতাংশ কমেছে। গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দশমিক তিন শতাংশ ও দশমিক চার শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির পর গত মাসে কমলো। অক্টোবরে সাড়ে সাত বছরের মধ্যে মজুরি সবচেয়ে বেশি হয়েছিল। খনি, ম্যানুফ্যাকচারিং ও ইউটিলিটি খাতে গড়ে ঘণ্টাপ্রতি মজুরি হ্রাসে ভূমিকা রেখেছে। এক বছরের মধ্যে প্রথমবার দেশটির মজুরি কমলো।
এর আগে বাণিজ্য বিভাগের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। দুবছরের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। আর এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে ভোক্তা খরচ ও রফতানি খাত।
তথ্যমতে, তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বেড়েছে তিন দশমিক দুই শতাংশ হারে। এর আগে দুই দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। ২০১৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের পর এটাই প্রবৃদ্ধির সর্বোচ্চ হার। ওই সময় উল্লেখযোগ্য রফতানি ও অভ্যন্তরীণ ভোক্তা খরচ প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
তৃতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি ২০১৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের পর বেশি হারে বেড়েছে। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলে সয়াবিন চাষ কম হওয়ায় ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র রেকর্ড পরিমাণ সয়াবিন রফতানি করেছিল, যা মোট রফতানিতে অবদান রেখেছে। দেশটির জিডিপির দশমিক ৮৭ শতাংশ এসেছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে। আগে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল দশমিক ৮৩ শতাংশের।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে দুই-তৃতীয়াংশ অবদান রাখে ভোক্তা খরচ। গত মাসের এক প্রতিবেদনমতে, তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটিতে এটি বেড়েছে দুই দশমিক আট শতাংশ হারে। এর আগে পূর্বাভাসে দুই দশমিক এক শতাংশ ভোক্তা খরচ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল। ফলে এ খাতটিও জিডিপিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে চার দশমিক তিন শতাংশের চেয়ে এ হার এখনও নিচে।
বাণিজ্য বিভাগের তথ্যমতে, অক্টোবরে দেশটির খুচরা বিক্রি আগের মাসের চেয়ে দশমিক আট শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে চার দশমিক তিন শতাংশ বেড়েছে। এর আগে সেপ্টেম্বরে বিক্রি দশমিক ছয় শতাংশ থেকে বেড়ে এক শতাংশ হয়েছিল। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে একত্রে বিক্রি ২০১৪ সালের পর থেকে দুই মাসের বিক্রি এটাই সর্বোচ্চ।
তথ্যমতে, ওই সময় দেশটিতে ভবন নির্মাণসামগ্রীর চাহিদা ও বিক্রিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। গত মাসে গাড়ি বিক্রি বেড়েছে এক দশমিক এক শতাংশ। তার আগে সেপ্টেম্বরে বেড়েছিল এক দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া অক্টোবরে পেট্রলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেবা স্টেশন খরচ বেড়েছে দুই দশমিক দুই শতাংশ।
পৃথক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তৃতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন খাতের দাম বেড়েছে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর দেশটির এ খাত পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ায়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সৃষ্ট অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটির ভোক্তা আস্থা ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ফেডারেল রিজার্ভ সম্প্রতি চতুর্থ প্রান্তিকের জন্য তিন দশমিক ছয় শতাংশ মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস দিয়েছে। প্রবৃদ্ধির এ উচ্চহার এবং মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির প্রত্যাশা আগামী মাসে ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) বৈঠকে সুদহার বাড়ানোর সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গত মাসের শুরুতে ফেড জানিয়েছিল, ১৩-১৪ ডিসেম্বরের নীতিনির্ধারণী সভায় প্রবৃদ্ধির হার বিবেচনা করে সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দেশটিতে নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তায় অর্থনীতিতে গত কয়েক প্রান্তিকে নেতিবাচক প্রবণতা ছিল। এছাড়া দেশটির শ্রমবাজারও ছিল অনেকটা হতাশাজনক।
সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত নীতিনির্ধারণী সভায় সুদহার বাড়ানোর একটা সম্ভাবনা থাকলেও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না হওয়ায় এবং শ্রমবাজারে খারাপ অবস্থার কারণে তা হয়নি। তবে এ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ডিসেম্বরে পরবর্তী সভায় ফেড সুদের হার বাড়াবে বলে বিশ্লেষকরা মতামত দিয়েছিলেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবকাঠামো খরচ ও কর মওকুফের মতো উদ্দীপক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে আগামী বছরও প্রবৃদ্ধির এ উচ্চ হার বজায় থাকবে।