Print Date & Time : 1 July 2025 Tuesday 4:33 am

যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি কমলেও বেড়েছে আমদানি

জাকারিয়া পলাশ: একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশি পণ্যের সর্বাধিক রফতানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বাংলাদেশ উদ্বৃত্ত অবস্থানে আছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে বিপরীতমুখী ধারা দেখা যাচ্ছে। একদিকে গত অর্থবছরে দেশটিতে বাংলাদেশের রফতানি কমেছে, অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির পরিমাণ।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ট্রেড এস্টিমেশন’-এর (এনটিই) প্রতিবেদনেও এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ইপিবির তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৮৪ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের রফতানি আয় হয়েছে। আগের বছর এ আয় ছিল ৬২২ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত অর্থবছরে প্রায় ৩৭ কোটি ডলারের রফতানি হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের আমদানি ছিল ৭৬ কোটি ডলারের মতো, যা পরের বছরে একশ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি হয় ১১২ কোটি ৬২ লাখ ডলার। আমদানি-রফতানির এই পরিবর্তনের ফলে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে উদ্বৃত্ত ৫২১ কোটি ডলার থেকে গত অর্থবছরে ৪৭২ কোটি ডলারে নেমে আসে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সফটওয়্যার, প্রযুক্তিপণ্য, তুলা ইত্যাদি আমদানি হয় বাংলাদেশে। অন্যদিকে দেশটির বাজারে রফতানির বড় অংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক। একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের বৃহত্তম বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হচ্ছে জার্মানি। পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মোট রফতানি প্রায় ৫৮৫ কোটি ডলার, এর মধ্যে পোশাক খাতের রফতানি আয় হচ্ছে ৫২০ কোটি ডলার।
এ প্রসঙ্গে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই তৈরি পোশাক রফতানি কমেছে। এর অনেকগুলো কারণ আছে। কারখানা সংস্কারের কারণে আমাদের উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও পণ্যের মূল্য বাড়েনি। এছাড়া বৈশ্বিকভাবে তেলের মূল্যসহ অনেক কিছুতেই পরিবর্তন এসেছে, যার সঙ্গে বাংলাদেশ সমন্বয় করতে পারেনি। এগুলো রফতানির বাজারকে প্রভাবিত করেছে।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দফতর পৃথিবীর প্রায় ৭০টি দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ সম্পর্কে দেশভিত্তিক প্রতিবেদন দিয়েছে সম্প্রতি। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। তাতেও বাংলাদেশের রফতানি হ্রাস ও আমদানি বৃদ্ধির তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগ (এডিআই) কিছুটা বেড়েছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে দেশটির এফডিআই ছিল ৬১ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগের এ অবস্থা আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশে বিদেশি কোম্পানির ব্যবসার ক্ষেত্রে নানা রকম আইনি জটিলতার কথা উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এতে আমদানি নীতি, ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধাসহ মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় বাংলাদেশের দুর্বলতার কথা তুলে ধরা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ ও ২০১৭ সালেও দেশটির দেওয়া এনটিই প্রতিবেদনে ওইসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে তেমন কোনো অগ্রগতির কথা দেখা যায়নি। বরং প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের গত বছরের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে আরও কিছু নতুন বিষয় সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, টেলিযোগাযোগ, ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্সের মতো কমার্শিয়াল খাতে ব্যাপক নিয়ন্ত্রণমূলক বিধি রয়েছে বাংলাদেশে। লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়ায়ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে। ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধা ছাড়াও অদক্ষ আমলাতন্ত্র, কর্মকর্তাদের যত্রতত্র বদলি ও স্বচ্ছতার অভাব বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য বাধা বলে উল্লেখ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে।
এছাড়া বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থায় বিনিয়োগের লভ্যাংশ ফেরত নেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তারা সামান্য অর্থও বাইরে ছাড় করতে দেন না অর্থপাচারের ভয়ে। এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একতরফাভাবে নির্দিষ্ট বহুজাতিক কোম্পানিকে টার্গেট করে পুরোনো শুল্ক-মামলা হাজির করছে। এছাড়া জমি নিয়ে বিরোধ ও জমি বিক্রির পর ফের তার মালিকানা দাবি করাসহ নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবি করা হয় দেশটির প্রতিবেদনে।