শেয়ার বিজ ডেস্ক: সীমান্তে ধরপাকড়ের কারণে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক শীর্ষ সীমান্ত কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বাইডেন প্রশাসনের সীমান্ত-সংক্রান্ত নতুন কিছু নীতি বাস্তবায়নের ফলেই যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা কমেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওই সীমান্ত কর্মকর্তা বলেন, এ প্রবণতা চলমান থাকবে কি না, তা নির্দিষ্ট করে এখনই বলা যাবে না। তবে আমার ধারণা, এটি সম্ভাব্য কিছু প্রাথমিক সাফল্যের ইঙ্গিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, এর আগের দিনগুলোর চেয়ে গত রোববার সীমান্ত অতিক্রমকারী অভিবাসীদের সংখ্যা ২০ শতাংশ কমেছে। এদিন ইউএস বর্ডার পেট্রোলের কর্মকর্তারা প্রায় তিন হাজার ১০০ অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেন।
আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এর আগে অভিবাসী-সংক্রান্ত সমস্যা দেশটিতে প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০২০ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিধিনিষেধমূলক অভিবাসন নীতিগুলো পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসেন বাইডেন। অভিবাসন নীতি শিথিল করার ফলে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় সীমান্তে রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসীর সমাগম হওয়ায় বাইডেন সীমান্ত-সংক্রান্ত নীতিমালা আবার কঠোর করেন।
বাইডেন প্রশাসনের বুধবার প্রয়োগ করা নতুন নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রমকারী অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীরা এখন থেকে দেশটিতে আশ্রয় চাইতে পারবে না। তবে সঙ্গীহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু, গুরুতর চিকিৎসা বা নিরাপত্তা সমস্যায় পড়া ব্যক্তি ও পাচারের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ নিয়মের ব্যতিক্রম রয়েছে।
নতুন নীতির লক্ষ্য হলো ‘দ্রুত স্থানান্তর’ প্রক্রিয়ার অধীন সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসীকে নির্বাসন প্রক্রিয়ার আওতায় আনা। গত বুধবার থেকে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি অভিবাসীকে দ্রুত স্থানান্তরের আওতায় আনা হচ্ছে।
এদিকে বাইডেন প্রশাসনের গৃহীত নতুন এ নীতির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন।
গত মে মাসে বাইডেন প্রশাসন অভিবাসন আদালতে নতুন আসা অভিবাসীদের ভাগ্য নির্ধারণের সময় কমিয়ে ছয় মাসে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে নতুন একটি প্রক্রিয়া তৈরি করে। এই উদ্যোগের অধীন অবিবাহিত প্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসী যারা সবেমাত্র দেশে প্রবেশ করেছেন এবং পাঁচটি নির্দিষ্ট শহরে যাচ্ছেন, তাদের মামলাগুলো ১৮০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়ার লক্ষ্যে বিচারকদের একটি নির্বাচিত গ্রুপ দ্বারা তদারকি করা হবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত চাপযুক্ত অভিবাসন ব্যবস্থার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তুলনার চেয়ে অনেক দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে। অভিবাসন প্রক্রিয়া শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গড়ে চার বছর সময় লাগতে পারে। মামলাগুলোয় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ থাকার অনুমতিহীন মানুষদের আরও দ্রুত সরিয়ে দিতে পারে। তবে কতজন অভিবাসী এই নতুন ডকেটের মধ্য দিয়ে যাবেন, তা স্পষ্ট নয়। এটি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নতুন ডকেটটি হবে আটলান্টা, বোস্টন, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলস ও নিউইয়র্কে। কর্মকর্তারা বলেন, এই শহরগুলো বেছে নেয়ার কারণ সেখানকার বিচারকদের মামলার শুনানির জন্য কিছুটা সময় রয়েছে এবং এই শহরগুলো অভিবাসীদের বড় গন্তব্য। দেশটির অভিবাসন আদালতে এখন রেকর্ড পরিমাণ ৩০ লাখ মামলা আটকে রয়েছে। এখানে প্রায় ৬০০ বিচারক রয়েছেন। ঘোষিত পরিকল্পনায় আরও বিচারক নেয়ার জন্য অর্থ অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অনুমোদিত একটি দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত চুক্তিতে ১০০ নতুন অভিবাসন বিচারক ও সহযোগীর জন্য অর্থায়নের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু রিপাবলিকান পার্টির সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সহকর্মী রিপাবলিকানদের এই চুক্তি বাতিল করার আহ্বান জানান এবং এটি দ্রুত বাতিল হয়ে যায়।