শেয়ার বিজ ডেস্ক: বাণিজ্য নিয়ে চলমান বিবাদ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সরে আসা অসম্ভব হতে পারে। তবে দেশ দুটিকে অত্যন্ত বোকার মতো আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট। গত শনিবার নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যের ওমাহায় বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের শেয়ারহোল্ডারদের বার্ষিক সভায় এ কথা বলেন তিনি। খবর রয়টার্স।
তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও অন্যান্য দিক দিয়ে বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বিশ্বের দুটি পরাশক্তি হয়ে থাকবে। দেশ দুটির বেশ কিছু অভিন্ন স্বার্থ আছে। যেকোনো দুটি বড় অর্থনীতির দেশের মধ্যে কখনও উত্তেজনাও থাকবে, কিন্তু বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উভয় দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন বাফেট। তিনি বলেন, ‘আমাদের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে এবং বাণিজ্য নিয়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে মতবিরোধ আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ওপর বিশ্বের অনেক কিছু নির্ভর করছে।’
গত মার্চে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কারোপের ঘোষণার পর থেকেই বাণিজ্য উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ট্রাম্প পাঁচ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শুল্কারোপের ঘোষণা দিলে পাল্টা জবাবে চীনও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্কারোপের ঘোষণা দেয়। এরপর ট্রাম্প আরও ১০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যে শুল্কারোপের ঘোষণা দিলে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে। এতে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেয়। যদিও এখন পর্যন্ত ওই শুল্ক কোনো দেশই আরোপ করেনি।
বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কার সমাধান খুঁজতে অবশেষে আলোচনার টেবিলে বসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এ দু’দেশ। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার চীনে ট্রাম্প প্রশাসনের একটি প্রতিনিধিদল চীন-মার্কিন বাণিজ্য ও বাণিজ্য সহযোগিতার সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে আলোচনায় বসে। এ বিষয়ে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভ মুচিনের বরাত দিয়ে হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে চীনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা হয়েছে।’ তবে ওই বিবৃতিতে এটা বলা হয়নি যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুল্ক আরোপ বাতিলের বিষয়ে কিছু ভাবছেন কি না।
তবে চীনা গণমাধ্যমগুলো ওই বাণিজ্য আলোচনা নিয়ে বেশ আশাবাদী। তারা বলছে, দুই দিনব্যাপী আলোচনায় ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে। বাণিজ্য বিরোধে সমাধান আনতে হলে এ ধরনের আলোচনার পথ খোলা রাখতে হবে।
এদিকে চীনের মতো আশাবাদী ওয়ারেন বাফেটও। তিনি চীনে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তার বয়স এখন ৮৮। আর আট সংখ্যা চীনের জন্য সৌভাগ্যের। এটি চীনের জন্য কিছু অর্জন করার সময় বলে মন্তব্য করেন বাফেট।
মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের তথ্যমতে, চীনের সঙ্গে ২০১৬ সালে দেশটির পণ্য ও সেবা বাণিজ্য হয়েছে ৬৪৮ দশমিক দুই বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে চীন দেশটিতে রফতানি করেছে ৪৭৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র চীনে রফতানি করেছে ১৬৯ দশমিক তিন বিলিয়ন ডলারের পণ্য। ওই বছর চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।