Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 4:17 pm

যুক্তরাষ্ট্র চট্টগ্রামে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম:ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্য এবং পাহাড়-নদী-সমুদ্র-সমতট বেষ্টিত চট্টগ্রাম নগরীর নান্দনিক রূপে আমি মুগ্ধ ও বিমোহিত। এ ছাড়া এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর একটি প্রাচীনতম বাণিজ্যিক পোতাশ্রয়। এ কারণে সুদূর অতীতে পৃথিবীর নানা প্রান্তের বণিক, পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা নৌ-বহর নিয়ে চট্টগ্রামে যাওয়া-আসা করেছেন। তাই তখন থেকেই চট্টগ্রামের পরিচিতি, কদর, গুরুত্ব ও খ্যাতি বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। বর্তমানে চট্টগ্রামে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা ও ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের চোখ চট্টগ্রামের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রও চট্টগ্রামে বিনিয়োগে আগ্রহী। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইসিটি ও পর্যটন খাতে বিনিয়োগে ও সম্ভাব্যতা যাচাই-পূর্বক পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার গতকাল চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে তার দপ্তরে সাক্ষাৎকালে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এখন যেভাবে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে এবং হচ্ছে, তাতে চট্টগ্রাম অচিরেই রিজিয়নাল ও গ্লোবাল কানেক্টিভিটির কার্যকর যোগসূত্র হিসেবে সংযোজিত হবে। এখানে যেসব অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো গড়ে উঠেছে, তাতে বিশ্বের বড় বড় অর্থনৈতিক শক্তির অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে তার ইতিবাচক প্রভাব শুধু বাংলাদেশ বা অঞ্চলগত নয়, বৈশ্বিকভাবে প্রতিফলিত হবে।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত চসিক মেয়রের কাছ থেকে মিয়ানমার থেকে আসা বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের অবস্থা ও সমস্যা এবং কভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি বর্তমানে কী অবস্থায় ও কোন স্তরে আছে তা জানতে চান।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলারকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত অকৃত্রিম আগ্রহে চট্টগ্রাম এখন বৈশ্বিক সম্পদে পরিণত হচ্ছে। কর্ণফুলী তলদেশ দিয়ে নির্মিত টানেল চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’-এ পরিণত করতে যাচ্ছে। রেলপথ কক্সবাজার পর্যন্ত সম্প্রসারিত হলে মিয়ানমার হয়ে চীন পর্যন্ত যোগাযোগ সংযোগের দ্বার খুলে যাবে। মিরসরাই ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো শিল্পায়নের ক্ষেত্রে চমক দেখাবে। গোটা চট্টগ্রামই পর্যটনশিল্পের দ্যুতি ছড়াবে। তাই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করে দিতে পারাটাই আমাদের এখন বড় কাজ ও দায়বদ্ধতা। এ কাজটা সম্মিলিতভাবেই করতে হবে। এ জন্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তির সহায়তা ও অংশগ্রহণ প্রয়োজন। একই সঙ্গে আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ওপর জোর দিতে চাই।

চসিক মেয়র মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরিভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, বাংলাদেশ একটি ঘন বসতিপূর্ণ জনপদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক কারণে তাদের এদেশে আশ্রয় দিয়েছেন এবং তাদের লালন-পালনের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে যাচ্ছেন। রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। এ পরিস্থিতি নিরসনের একমাত্র সমাধান হচ্ছে তাদের দ্রুত নিজ মাতৃভূমিতে প্রাপ্য মর্যাদা ও স্বীকৃতি অনুযায়ী প্রত্যাবাসন করা। তিনি রাষ্ট্রদূতকে আরও অবহিত করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার কারণে করোনার পরিস্থিতিকে সামাল দেয়া সম্ভব হয়েছে। করোনা সংক্রমণ এখনও চলমান থাকলেও তার হার নি¤œমুখী। ইতোমধ্যে দেশে ২০ শতাংশের বেশি মানুষকে করোনার প্রতিশেধক টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে এবং আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে বলে সরকার আশাবাদী। তিনি করোনা প্রতিরোধে টিকা সরবরাহসহ সার্বিক সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহীদুল আলম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কাউন্সিলর ফর পলিটিকেল অ্যান্ড ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স স্কট এ ব্র্যান্ডন, ইকোনমিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল স্পেশালিস্ট শাহীনুর সিকদার, ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী, অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী প্রমুখ।