নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারের বিরুদ্ধে ‘বৃহত্তর ঐক্যের’ ভিত্তিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপি ঐকমত্যে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলামগীর। গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাত দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব ফখরুল সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
দুই ঘণ্টার সংলাপ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে একটা গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করতে আমরা একযোগে যুগপৎ আন্দোলন করবÑএ ব্যাপারে আজকে বৈঠকে আমরা একমত হয়েছি। এরই মধ্যে এই কাজ আমরা শুরু করেছি।’
এই সংলাপকে বাংলাদেশের জন্য একটি ‘ঐতিহাসিক দিন’ বলে বর্ণনা করে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, সারা পৃথিবীর কাছে আজকে বার্তা যাবে, বাংলাদেশের জনগণ রাতের অন্ধকারে যারা ভোট চুরি করেছে অনৈতিকভাবে, অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে, তাদের সরানোর জন্য বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই স্বৈরাচারের শুধু পতন ঘটাবে না, রাষ্ট্র মেরামত করবে, সংস্কার করবে, সংবিধান সংস্কার করবে এবং আন্দোলন ও নির্বাচন দুটাই একসঙ্গে করবে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা আপনারদের সামনে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে যুগপৎভাবে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য এখন থেকেই, এরকম করেই আন্দোলনে থাকব। বিএনপির ‘ভিশন ২০২০’-এ বর্ণিত বিভিন্ন প্রস্তাবের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের প্রস্তাবের সাদৃশ্য আছে বলেও মন্তব্য করেন মান্না।
সংলাপে বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
অন্যদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) আসম আবদুর রব, শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, আকবর খান, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, আবুল হাসান রুবেল, গণঅধিকার পরিষদের ফারুক হাসান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন, ইমরান ইমন প্রমুখ।
আসম আবদুর রবের ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ নিয়ে মন্তব্যের সূত্র ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, সংলাপে আমরা রাষ্ট্রের পরিবর্তনের যে কথা বলেছি, সেই পরিবর্তনগুলো আমরা আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে আশা করি একমত হতে পারব।
আলোচনাকে এগিয়ে নিতে আগামীতে আরও কয়েকটি বৈঠক করা হবে বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাব বলে আমরা নিশ্চিত।’
আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা জানেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে প্রচণ্ড রকমের একটা আগ্রহ-উদ্যম সৃষ্টি হয়েছে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতনের লক্ষ্যে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ বিষয়কে ত্বরান্বিত করার জন্যে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে দ্রুত অগ্রসর হতে একটা লিয়াজোঁ কমিটি আমরা গঠন করব, যার মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য, আমাদের দফাগুলো, আমাদের কর্মসূচি, রূপরেখা সবগুলো থাকবে। এ ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সরকার পতনের লক্ষ্যে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে আপাতত যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে পারব, ক্ষমতাসীনদের পরাজিত করতে সক্ষম হব।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির বক্তব্যেও উঠে আসে নির্বাচন প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা কেউ যাব না। আমরা যেটা দাবি করেছি, সেটা হচ্ছে এই সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে।
গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বিদেশে ও সদস্য সচিব নুরুল হক নূর একটি দূতাবাসে সাক্ষাৎকারে থাকায় তারা বৈঠকে অংশ নিতে পারেননি বলে জানান গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। চলতি বছরের ৮ আগস্ট আত্মপ্রকাশ করে নতুন রাজনৈতিক জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। বিএনপির সঙ্গে এটাই জোটের নেতাদের প্রথম সংলাপ।
এর আগ চলতি বছরের মে ও জুন মাসে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জনসংহতি আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে সংলাপ করেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।