Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 10:31 am

যুদ্ধকালীন অর্থনীতির ধাক্কা সামলাতে পারবে রাশিয়া?

শেয়ার বিজ ডেস্ক: রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দরপতন চলছে এবং দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সামলে ওঠার জন্য চেষ্টা করছে। দুর্বল মুদ্রা দেশটির জনগণের ওপর খড়গ হয়ে নামতে পারে, কেননা এতে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই সরকার এর পতন ঠেকাতে তৎপর হয়ে উঠেছে। খবর: এপি।

বিদেশে রাশিয়ার বিক্রি কমেছে। তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে তাদের রাজস্ব আয় কমেছে এবং আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রাশিয়া যখন পণ্য আমদানি করে, তখন ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডলার বা ইউরোর বিপরীতে রুবলে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এতে রুবলের বিনিময় হার কমেছে।

রাশিয়ার বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে। এর অর্থ দেশটি কেনার তুলনায় বিদেশে অনেক পণ্য বিক্রি করছে। বাণিজ্যিক উদ্বৃত্ত মূলত একটি দেশের মুদ্রাব্যবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। এর আগে ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং আমদানি কমায় রাশিয়ায় আরও বড় আকারে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছিল।

তবে চলতি বছরে তেলের দাম কমেছে এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার পক্ষে তেল বিক্রি করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত ক্রড অয়েল এবং ডিজেল।

কিয়েভ স্কুল অব ইকোনমিকস ইনস্টিটিউটের মতে, বিদেশি মুদ্রার প্রবাহ কমে আসার পেছনে রপ্তানির পতন প্রধান ভূমিকা রেখেছে।

রাশিয়ার আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে, কেননা দেশটির নাগরিকরা নিষেধাজ্ঞা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন। নিষেধাজ্ঞা অবজ্ঞা করে এশিয়ার কয়েকটি দেশ রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারত ও চীন। দেশ দু’টি গত এক বছরে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বাড়িয়েছে। আমদানিকারকরা রাশিয়ার তেল এবং অন্যান্য পণ্য কেনার জন্য আর্মেনিয়া, জর্জিয়া ও কাজাখস্তানের বন্দর ব্যবহার করছে।

একই সময় রাশিয়া প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধি করেছে। যেসব প্রতিষ্ঠান অস্ত্র নির্মাণ করে সেখানে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে অস্ত্র নির্মাণের যন্ত্রাংশ এবং কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। তাই সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন শ্রমিকরা। এছাড়া রাশিয়া শ্রমিক সংকটেও ভুগছে।

ভারত ও চীনের কারণে যুদ্ধেও প্রত্যাশার চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে রাশিয়ার অর্থনীতি। এ কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল জানিয়েছে, চলতি বছরে রাশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৫ শতাংশ।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে সুদের হার বৃদ্ধি করেছে। দুর্বল রুবলের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, এতে আমদানি ব্যয় মেটাতে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। গত তিন মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬ শতাংশে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যা ৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায়।

দ্য ব্যাংক অব রাশিয়া জানায়, মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে সুদের হার সাড়ে আট শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২ শতাংশ করা হয়েছে। ক্রেমলিনের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ব্যাংককে তিরস্কারের পর এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

তাই বলা হচ্ছে, নিষেধাজ্ঞা কী কাজ করছে? উত্তরে বিশেষজ্ঞরা যে দ্বিধায় রয়েছেন, তা স্পস্ট। নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে রাশিয়ার তেল কেনা বয়কট করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে বিকল্প বাজারে কম দামে তেল সরবরাহ করছে রাশিয়া। তেল থেকে রাজস্ব আয় বছরের প্রথমার্ধে ২৩ শতাংশ কমেছে, ওদিকে রাশিয়া এখনও তেল বিক্রি করে প্রতিদিন ৪২৫ মিলিয়ন বা সাড়ে ৪২ কোটি ডলার আয় করছে, বলে জানায় কিয়েভ স্কুল অব ইকোনমিকস।

তাই ম্যাক্রো অ্যাডভাইজরি পার্টনারসের সিইও ক্রিস উইফার বলেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে রুবলের পতন হয়েছে, তবে এর মানে এই নয় যে, রাশিয়া যুদ্ধাকলীন অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে।

তিনি মনে করেন, রুবলের পতনে রাশিয়ার উপকার হয়েছে। কেননা এতে তেল ও অন্যান্য পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ডলারের বিপরীতে বেশি রুবল খরচ করতে হবে, যা দিয়ে সরকার সামরিক এবং অন্য সামাজিক কর্মসূচিতে ব্যয় করবে।