যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা দেয়া ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত ৮ তলা অফিস ভবন উদ্বোধন এবং বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ আমাদের দুর্ভাগ্য যে, যখন সারা বিশ্ব করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে, ঠিক সে সময়ে ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ফলে বিশ্বব্যাপী মানুষের অবস্থাটা আরও করুণ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার ওপর আমেরিকা যে সেঙ্কশন দিয়েছে, তা দেয়ার ফলে আমাদের পণ্য প্রাপ্তিতে বা যেগুলো আমরা আমদানি করি, সেখানে বিরাট বাধা আসছে। শুধু বাধাই নয়, পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে এবং আমরা কোথায় আমাদের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী পাব, সে প্রাপ্তির ক্ষেত্রটাও সংকুচিত হয়ে গেছে। এই প্রভাবটা শুধু বাংলাদেশ না, আমি মনে করি আমেরিকা, ইউরোপ থেকে শুরু করে সারা বিশ্ব এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ কিন্তু কষ্ট ভোগ করছে। এটা আসলে সবার, অন্তত উন্নত দেশগুলোর বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত। আমেরিকা সেঙ্কশন যাদের বিরুদ্ধে দিচ্ছে, তাদের আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন। কিন্তু কতটুকু তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? তার থেকে বেশি ক্ষতি হচ্ছে সব দেশের সাধারণ মানষের।
সরকারপ্রধান বলেন, করোনা মহামারি থেকে কেবল আমরা একটু উদ্ধার পাচ্ছিলাম, তখনই এই যুদ্ধ আর সেঙ্কশন। এটা সত্যি আমাদের জন্য বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আমি মনে করি, সেঙ্কশন দিয়ে কখনও কোনো দেশ বা জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সেটা নিশ্চয়ই এখন দেখতে পাচ্ছেন। এর প্রভাব তার নিজের দেশের ওপরও পড়ে। পণ্য পরিবহন বা আমদানি-রপ্তানি সহজভাবে হওয়া দরকার। কারণ খাদ্যটা মানুষের সব থেকে বড় চাহিদা। আর সেখানেই সমস্যায় পড়ে গেছে অনেক উন্নত দেশও।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে যে খবর পাই, আমাদেরও অনেক লোক সেখানে বসবাস করে। প্রত্যেকের জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে মানুষকে কষ্ট দেয়ার কী অর্থ থাকতে পারে আমরা ঠিক জানি না। একদিক থেকে বলতে গেলে এটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। মানুষের যে অধিকার আছে, সে অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। আমরা আশা করি একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে বিশ্বের মানুষকে শাস্তি দেয়া থেকে সরে আসাটাই বোধ হয় বাঞ্ছনীয়। সবাই সেটাই চাইবে বলে আমি মনে করি।
এ সময় করোনা ভাইরাসের কারণে প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, তার ওপর সেঙ্কশন আমাদের যথেষ্ট সমস্যার সৃষ্টি করছে। আশা করি এ বিষয়টি উন্নত দেশগুলো একটু দেখবে। জলবায়ুর অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো– আমরা যাতে বাঁচতে পারি, আমরা চাই সেটা সবাই দেখবে।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা বিষয় আমি না বললেই নয়, সেটা হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু। আমরা মানবিক কারণে এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু তিনটি বছর পূর্ণ হয়ে গেছে। আমাদের জন্য আসলে এটা একটি বিরাট বোঝা হয়ে গেছে। একে তো এই করোনা ভাইরাস, তার ওপরে যুদ্ধÑ এই পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলো যেখানে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের এই সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের ওপরে আরেকটি বোঝা টানা যে কত কষ্টকর, তা সবার উপলব্ধি করা উচিত।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশগুলো যদি আর একটু সক্রিয় হয়ে এই রোহিঙ্গারা যেন তাদের নিজের দেশে ফিরে যেতে পারে, সেটা দেখবে। তাদের ছেলেমেয়েরা যেন তাদের নিজের দেশে মানুষ হতে পারে, তারা একটা ভালো পরিবেশে চলে যেতে পারে, এভাবে ক্যাম্পের জীবনযাপন যেন না করতে হয়। তাদেরও তো একটা মানবাধিকার আছে। কাজেই সে ব্যাপারে সবাই একটু সক্রিয় হবেন সেটাই আমি আশা করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য যতটুকু আছে, আমরা সেভাবেই চলতে চাই। আমরা অহেতুক কারো কাছ থেকে অতিরিক্ত পয়সা নিই না। আমরা যেন কারো ওপর নির্ভরশীল হয়ে না পড়ি। আমরা যেন আত্মনির্ভরশীল থাকতে পারি, আত্মমর্যাদাশীল থাকতে পারি এবং আমরা যেন বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারি সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০