Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 8:38 pm

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হান্নান খানের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক এম আবদুল হান্নান খান। গতকাল রোববার বেলা পৌনে ১টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তার মৃত্যু হয় বলে সংস্থাটির সহ-সমন্বয়ক সানাউল হক জানান।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক শোক বাণীতে তারা তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

সানাউল হক বলেন, বৃহস্পতিবার হান্নান খানের জ্বর আসে। সেদিনই করোনাভাইরাসে পরীক্ষা করালে পজিটিভ আসে। জ্বর বেড়ে গেলে তাকে সিএমএইচে নেওয়া হয়। সেখানে গত দুদিন তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু আজ সকাল থেকে হঠাৎ করে অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। পৌনে ১টার সময় তিনি মারা যান।

মাস খানেক আগে হান্নান খানের হƒদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ব্রেইন স্ট্রোক করেছিলন। তবে সেটা থেকে সেরে উঠে বাসায় বিশ্রামেই ছিলেন। সানাউল বলেন, তার ‘ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যাটাক’ হয়েছিল বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

হান্নান খান পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে অবসরে যাওয়ার পর ২০১১ সালের ১২ জানুয়ারি তাকে আইজিপি পদমর্যাদায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

তিনি কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র ছিলেন। ১৯৬১ সালে এ কলেজে পড়া অবস্থায় পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার ফজলুল কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরীর বাবা) জনসভা প্রতিহত করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। তখন তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। এরপর ১৯৬২ সালে হামদুর রহমান শিক্ষা কমিশন আন্দোলনে কিশোরগঞ্জ মহকুমার ছাত্র সংগ্রাম কমিটির সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ছাত্র হান্নান খান আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৬৪ সালে ডাকসু নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ওই বছরই কার্জন হলে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনের (তৎকালীন গভর্নর মোনায়েন খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর হিসেবে প্রধান অতিথি ছিলেন) প্যান্ডেল ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় জননিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। সে মামলায় তখন তার ছয় মাসের জেল হয়।

স্বাধীনতার আগে আবদুল হান্নান খান ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া কলেজ, মৌলভীবাজার কলেজ, ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজ, জামালপুরের আশেক মাহমুদ কলেজে শিক্ষকতা করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ১১নং সেক্টরে থেকে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন হান্নান খান। ১৯৭৩ সালে বিসিএস প্রথম ব্যাচে এএসপি হন; প্রশিক্ষণে প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি। পরে ঢাকা মহানগর পুলিশ, পুলিশ সিকিউরিটি সেল ও সিআইডিতে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ মামলা ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা’র প্রধান তদন্ত তদারক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন হান্নান খান। এ সময় পলাতক আসামি মেজর হুদাকে ব্যাংকক থেকে ফেরত আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন। এছাড়া জেলহত্যা মামলা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলা ও তদন্ত তদারক কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

২০০০ সালে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর অবসরে যান আবদুল হান্নান খান।