শেয়ার বিজ ডেস্ক:বিশ্ব অর্থনীতি ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সংকটে পড়ায় অনেক দেশ মন্দার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। কভিড-১৯ মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি ও যুদ্ধের কারণে এমন আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক। খবর: বিবিসি।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে প্রবৃদ্ধির নিন্মগতি বিশ্ব অর্থনীতি স্থবির করেছে। এ কারণে ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দার বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্বজুড়ে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। যুদ্ধ, চীনের শূন্য কভিড নীতি, সরবরাহব্যবস্থায় বিঘ্ন ও অর্থনৈতিক ধীরগতি প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক দেশের জন্য মন্দা এড়ানো কঠিন হবে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান।
ম্যালপাস বলেন, বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এ দশকজুড়ে হয়ত প্রবৃদ্ধির ধীরগতি অব্যাহত থাকবে। অনেক দেশে মূল্যস্ফীতির হার ইতোমধ্যে কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চে পর্যায়ে পৌঁছেছে। উৎপাদন বাড়ার গতি থমকে গেছে। মূল্যস্ফীতির এই উচ্চহার হয়ত দীর্ঘদিন ভোগাবে।
এই পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে চলতি বছর বিশ্বের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে এক-তৃতীয়াংশ করা হয়েছে। ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৭ শতাংশ কমে যেতে পারে, যা ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৯ সালের অচলাবস্থার সময়ের প্রবৃদ্ধি কমার দ্বিগুণের বেশি। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, ১৯৭০ এর দশকের শেষ দিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সুদের হার বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু সেই পদক্ষেপই ১৯৮২ সালে ডেকে এনেছিল মন্দা। উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল দেশগুলোয় আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছিল।
বিশ্বব্যাংক এদিন যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের জন্য ১৪৯ বিলিয়ন ডলারের (১৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার) অতিরিক্ত তহবিল অনুমোদন করেছে। এ তহবিল সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবীদের মজুরি দিতে ব্যবহার করা হবে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও স্যানিটেশন সেবায় এই সহায়তা ব্যয় করা হবে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর একশ দিন পেরিয়ে গেছে। এখনও হামলার কেন্দ্রস্থল থেকে হাজার মাইল দূরে থাকা বিভিন্ন দেশ যুদ্ধের পরোক্ষ ধাক্কা টের পাচ্ছে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলো ধাক্কা সামলে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু খাদ্য ও জ্বালানির ক্রমবর্ধমান খরচ মানুষের জীবনকে ফের উল্টো স্রোতে নিয়ে ফেলছে। শুধু দরিদ্র দেশগুলো যে দুর্দশায় পড়েছে, তা নয়। এক জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটেনের প্রতি ছয়টি পরিবারের মধ্যে একটি সামর্থ্য হারিয়ে সরকারের ‘ফুড ব্যাংক’ থেকে খাবার নিচ্ছে। মূল্যস্ফীতি কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে। তাতে বিশ্বব্যাপী বিপর্যস্ত মানুষের সংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিশ্বব্যাংক এসব বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দিয়েছে। ঋণ থেকে মুক্তির পাশাপাশি খাদ্য রপ্তানিতে বিধিনিষেধ না রাখার আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলোকে। এ ছাড়া খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ বজায় রেখে অস্থিতিশীল বাজার ও দামের ঊর্ধ্বগতি হ্রাসে নীতিনির্ধারকদের একসঙ্গে কাজ করার আহŸান জানিয়েছে সংস্থাটি। বিশ্বের সব দেশকে ইতোমধ্যে কভিড মহামারি মোকাবিলা করতে হয়েছে। তাদের সেই সম্মিলিত চেষ্টা ব্যাহত হলে বিশ্ব আরও দীর্ঘ সংকটে পড়বে বলে বিশ্বব্যাংক সতর্ক করেছে। সংস্থা জানায়, এখনকার এই কঠিন পরিস্থিতি যে শুধু হতাশা ও সামাজিক অস্থিরতা ডেকে আনবে, তা নয়, বছরের পর বছর এ সংকট মানুষকে দুর্দশায় নিমজ্জিত করতে পারে। তবে বিশ্বব্যাংকের মতে, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হবে ইউক্রেন ও রাশিয়াকে। যুদ্ধ ও মহামারির কারণে সেই ভোগান্তি হবে দীর্ঘ।
বিশ্বব্যাংকের প্রসপেক্টস গ্রুপের পরিচালক আয়হান কোস বলেন, জ্বালানির ক্রমবর্ধমান দাম নিয়ন্ত্রণে আনা কোনো সরকারের জন্য সহজ নয়। তাই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেয়া, ভর্তুকি বাড়ানো কিংবা বাজার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত হবে না।