যুদ্ধের কারণে যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৯%

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাজ্যে গত মাসে মূল্যস্ফীতি বাড়ে ৯ শতাংশ, যা ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। খবর: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় বাড়ায় সংকটে থাকা  পরিবারগুলোর জন্য সহায়তা বাড়াতে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। ভোক্তা মূল্যস্ফীতি এপ্রিলে ৯ শতাংশে পৌঁছায়। অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস (ওএনএস) গতকাল জানায়, নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকের মন্দার চ‚ড়ায় ওঠে দেশটি, যা গত মাসে ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৮২ সালের পর এমন ঘটনার শিকার হলো দেশটি। সে সময়ে উচ্চ সুদহার ও ব্যাপক বন্ধকী খেলাপি ঋণের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল।

ইউরোপের পাঁচটি বৃহৎ অর্থনীতির একটি যুক্তরাজ্য। তবে অন্য দেশগুলো এখনও মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি। এর বাইরে কানাডা ও জাপানও তাদের এপ্রিলের পরিসংখ্যান জানায়নি।

দেশটির অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক জানান, বিশ্বের প্রায় সব দেশ ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে। তিনি বলেন, আমাদের মূল্যস্ফীতির জন্য ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বিশেষভাবে দায়ী। আমরা এই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো থেকে মানুষকে সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করতে পারছি না। তবে আমরা তাদের যথাযথ সহায়তা করে যাচ্ছি এবং আরও পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক।

এ তথ্য প্রকাশের পর পাউন্ড স্টার্লিংয়ের মান হ্রাস পেয়েছে, ডলারের বিপরীতে এর মান শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ কমেছে। ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মূল্যস্ফীতির বড় নিয়ামক, যা গত মাসে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে ভ‚মিকা রাখে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী অক্টোবরে আবার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে মূল্যস্ফীতি।

যুক্তরাজ্যে রেস্তোরাঁ ও ক্যাফেগুলোয় সব ধরনের খাবারের দাম বাড়ে। কারণ মূল্য সংযোজন করহার গত মাসে কভিড মহামারির সময়ের মতো একই ছিল। এতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। গত বছর এপ্রিল থেকে ১২ মাসে খাদ্যের দাম প্রায় সাত শতাংশ বেড়েছে বলে জানায় ওএনএস। কারখানাগুলোয় সব কাঁচামালের দাম ১৪ শতাংশ বাড়ে, যা ২০০৮ সালের জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ।

সরকার জানায়, এরই মধ্যে অনেক পরিবারের জন্য ২২ বিলিয়ন পাউন্ড সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এর বেশিরভাগই কর্মীদের ওপর সাম্প্রতিক কর বৃদ্ধির প্রভাবের কারণে বাতিল করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরের শেষ ভাগে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা, ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা সুদহার এ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।

গত সোমবার, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যান্ড্র– বেইলি আইন প্রণেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তখন তিনি খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করেন। যুক্তরাজ্যের ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ পল ডেলস জানান, পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

মূল্যস্ফীতির চাপ নানাভাবে পড়তে শুরু করেছে যুক্তরাজ্যে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে আগামী বছর দেশটির প্রায় ১০ লাখ ৫০ হাজার পরিবারকে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্য পরিশোধ করতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। জানা গেছে, মূল্যস্ফীতির চাপে আগামী বছরের মধ্যে দেশটিতে দারিদ্র্য বাড়বে। প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার পরিবার অভাবে পড়বে এবং অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১২ লাখে উঠবে বলে জানায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিকস অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ।

শুধু যুক্তরাজ্য নয়, মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি স্থবির হয়ে পড়ছে। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চলতি বছর যুক্তরাজ্য আবার মন্দার মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিকস অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ। ঋণগ্রস্ত ও অভাবে থাকা মানুষদের সাহায্য করতে অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাকের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন তারা। তবে যুক্তরাজ্যের রাজস্ব বিভাগ বলেছে, তারা দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০