Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 10:51 am

যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক অবস্থানে আমদানিকারকরা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে আমদানি করা গ্যাস, জ্বালানি, ভোজ্যতেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যেন আকাশ ছুঁয়েছিল। দুই সপ্তাহ পর বাজার অনেকটা সংশোধিত হয়েছে। যদিও বিশ্ববাজার থেকে পড়তি দামে এখনই পণ্য না এলেও দেশের পাইকারি বাজারে দাম কমছে। যুদ্ধবিরতি হলে এ ধারা কি নিয়মিত হবে, অথবা যুদ্ধ পরিস্থিতি কি আরও জটিল হলে দাম বাড়বে এ নিয়ে সারাক্ষণ বিশ্লেষণ করছেন দেশের আমদানিকারকরা। কারণ এ দুইয়ের প্রভাবে লোকসান হলে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে।

আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের জ্বালানি পণ্য তেল ও গ্যাস, ভোজ্যতেল, পরিত্যক্ত জাহাজ, গম, চিনি ও রাসায়নিক পদার্থের দাম সর্বোচ্চ দামকে ছুঁয়ে যায়। নিত্যপণ্য গমের বড় উৎস হলো রাশিয়া ও ইউক্রেন। দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বে গমের সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। কারণ এ দুটি দেশ গত মৌসুমে বৈশ্বিক গম রপ্তানির ২৮ শতাংশ করেছে। ফলে সংঘাতের পর দেশ দুটি থেকে সরবরাহে অনিশ্চয়তার জন্য প্রভাব পড়ে। এতে গমের দাম বাড়ে। যেমন শিকাগোতে ‘সফট রেড উইন্টার’ জাতের গমের দাম ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতি কেজি ছিল ২৯ টাকা ৩২ পয়সা, যা গত ৭ মার্চ ৪৫ টাকায় ওঠে। গত বুধবার দাম কমে ৩৩ টাকা ৭৮ পয়সা হয়। অপরদিকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শিকাগোতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১২৬ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল। এরপর লিটারে তা ১৬ টাকা বেড়ে ১৪২ টাকা ৫০ পয়সায় ওঠে।

এরপর গত সোম থেকে বুধবার তিন দিনে লিটারে ১৫ টাকা কমে ১২৭ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে আসে। তবে গত বৃহস্পতিবার আবার দর বেড়ে যায়। একইভাবে চিনিসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম কমেছে, যার প্রভাবে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে সয়াবিনের দাম লিটারে ৯ টাকা কমেছে। পাম তেলের দাম কমেছে লিটারে ১৪ টাকা। চিনির দামও প্রতি কেজি দুই টাকা কমেছে। তবে গমের দামে খুব একটা প্রভাব পড়েনি। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় বিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে।

পড়তি দাম কত দিন স্থিতিশীল থাকে, তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যায় না। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শেষ না হলে এবং জ্বালানির দাম না কমলে এ বাজার স্থিতিশীল হবে না। এসব বিষয় নিয়ে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা সতর্ক অবস্থানে আছেন।

পণ্যবাজার নিয়ে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে। আবার চীনের মতো বড় অর্থনীতির দেশে লকডাউনের খবরেও বাজারে প্রভাব পড়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কৌশলী অবস্থানে থাকতে হয়ে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা না করে বেশি বিনিয়োগ করলে তখন লোকসানে পড়ার আশঙ্কা থাকে। যেমনটা আমরা ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দেখি। সেই সময়ে ভোজ্যতেল, গম ও স্ত্র্যাপ জাহাজ আমদানিতে লোকসানে পড়ে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও শিল্পগ্রুপ দেউলিয়া হয়ে যায়। কারণ বৈশ্বিক ভোগ্যপণ্য সরবরাহকারীরা পণ্য সরবরাহের সময় এ দরের সঙ্গে

 জাহাজভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করে। কোনো পণ্য কেনার ঋণপত্র খোলা হলে দেশে পৌঁছাতে দেড় থেকে আড়াই মাস পর্যন্ত সময় লাগে। এ সময় যুদ্ধ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে, তখন দর আরও কমবে। সুতরাং ঝুঁকি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাই সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এতে দেশের বাজারে তেমন সংকট সৃষ্টি হবে না। বাজারগুলোয় মজুত যথেষ্ট আছে। এছাড়া পাইপলাইনে আরও আমদানিবাহী পণ্যভর্তি জাহাজ আছে।  

এ বিষয়ে ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক ও চিটাগং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিতে নাজুক অবস্থা বিরাজমান। এ সময়ে ডলারের অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধিতে ভোগ্যপণ্যের আমদানি ব্যয়সহ শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতির ব্যয়সহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য স্থিতিশীল থাকলেও শুধু ডলার মূল্যের পার্থক্যের কারণে পণ্যভেদে প্রতি কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা দাম বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে পর্যাপ্ত ডলার রিজার্ভ রয়েছে। দেশে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে এ সংকট কাটানো সম্ভব। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত মূল্য ৮৬ দশমিক শূন্য পাঁচ টাকা হলেও ব্যাংকগুলোয় ৮৮ দশমিক পাঁচ টাকা থেকে ৮৮ দশমিক ৫৫ টাকা পর্যন্ত ডলার লেনদেন হচ্ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডলারের দামের পার্থক্য দুই টাকার চেয়েও বেশি। ফলে আমদানিকারকদের বিপুল পরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হচ্ছে। খোলা বাজারে ডলারের দাম ৯২ টাকা অতিক্রম করেছে। এ অবস্থায় পবিত্র রমজান সামনে রেখে ভোগ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিপুল ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রে কিছুটা অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে।