শেয়ার বিজ ডেস্ক: গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরায়েল নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবটি তিনটি পর্যায়ে বাস্তবায়ন করার কথা বলা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হবে। এ সময়ে গাজার সব জনবহুল এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের তুলে নেয়া হবে। যুদ্ধবিরতির সময় হামাস ‘নির্দিষ্ট সংখ্যক’ জিম্মিকে মুক্তি দেবে। তাদের মধ্যে নারী, বয়স্ক ব্যক্তি ও আহত জিম্মিরা থাকবেন। এর বিনিময়ে ইসরায়েলে বন্দি থাকা কয়েকশ মানুষকে মুক্তি দেয়া হবে। এছাড়া হামাসের হাতে জিম্মি অবস্থায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে হবে। খবর: বিবিসি।
গাজার সব এলাকায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িঘরে ফিরতে সুযোগ দেয়া হবে। সেই সঙ্গে গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বাড়ানো হবে। গাজায় প্রতিদিন মানবিক সহায়তাবাহী ৬০০ ট্রাক ঢুকতে দেয়া হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজাবাসীর জন্য হাজারো সাময়িক আবাসনের ব্যবস্থা করবে।
ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা চলমান থাকবে। যদি আলোচনা সফল হয়, তাহলে পরবর্তী পর্যায়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করা হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে বাদবাকি জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস। তাদের মধ্যে জিম্মি পুরুষ সেনারাও থাকবেন। সেই সঙ্গে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সর্বশেষ সেনাকেও সরিয়ে নেয়া হবে। যুদ্ধবিরতিকে ‘স্থায়ীভাবে শত্রুতা বন্ধে’ উন্নীত করা হবে।
তৃতীয় পর্যায়ে জিম্মি ফেরানোর প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ করা হবে। গাজার জন্য বড় ধরনের একটি ‘পুনর্গঠন পরিকল্পনা’ বাস্তবায়ন শুরু করা হবে। এর আওতায় মার্কিন ও আন্তর্জাতিক সহায়তায় গাজা উপত্যকায় বাড়ি, বিদ্যালয় ও হাসপাতাল পুনর্নির্মাণ করা হবে।
ইসরায়েলের নতুন প্রস্তাব মেনে নিতে হামাসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, এ যুদ্ধ শেষ হওয়ার সময় এসেছে। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে বাইডেন এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তিন পর্যায়ের নতুন এই প্রস্তাবে গাজায় পুরোপুরি যুদ্ধবিরতি কার্যকরের সুযোগ রয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে।
হামাসের উদ্দেশে বাইডেন বলেন, হামাস সবসময় বলে থাকে, তারা যুদ্ধবিরতি চায়। এখন হামাসের সামনে প্রমাণ করার সুযোগ এসেছে যে, তারা আসলেই এটা চায় কি না। তবে দ্রুতই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বাইডেনের শান্তি আলোচনা শুরুর আহ্বানে নেতিবাচক মনোভাব দেখান।
এদিকে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় ইসরায়েলের দেয়া রূপরেখাকে গতকাল শুক্রবার ‘ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা’ করার কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নিতে হামাসের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের আহ্বান জানানোর পর শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি বিবৃতি দিয়েছে সংগঠনটি। বিবৃতিতে বলা হয়, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং এ উপত্যকার পুনর্গঠন ও বন্দি বিনিময় নিয়ে বাইডেনের বক্তব্যকে ইতিবাচকভাবে দেখছে তারা।
হামাসের প্রতি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেয়া এবং গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আহ্বানের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও। গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিয়ে এমন অগ্রগতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘জোরালো আশাবাদ’ ব্যক্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।
আশাবাদ জানিয়েছেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকও। তিনি বলেন, ইসরায়েলের প্রস্তাব যুদ্ধ বন্ধে আশার আলো ও একটি সম্ভাব্য পথ দেখাচ্ছে।
গাজায় রক্তপাত বন্ধে এ ‘ভারসাম্যপূর্ণ ও বাস্তবভিত্তিক’ দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রধান উরসুলা ভন ডার লেন। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় অতি ঘনবসতিপূর্ণ রাফা শহরে অভিযান না চালাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর তুমুল লড়াই শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে গতকাল ইসরায়েলের ওই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ঘোষণা করলেন বাইডেন।
