নিজস্ব প্রতিবেদক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘের দুর্বলতা রয়েছে, তবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়নি। জাতিসংঘ বিশ্বে দারিদ্র্যমুক্তি, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘের দুর্বলতা আছে, যার কারণ শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো। গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম আয়োজিত ‘জাতিসংঘের আঙিনায় শেখ হাসিনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে বিশ্বে খারাপ অবস্থা চলছে। বড় শক্তিগুলো যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, বরং আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি।’ জাতিসংঘকে শক্তিশালী করতে নিরাপত্তা পরিষদের পুনর্গঠন দরকার বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, বন্ধুত্বের নীতিতে দেশ চলছে বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। তা আজও বিদ্যমান আছে দেশের নীতিতে। আমরা বঙ্গবন্ধুর নীতিতে বিশ্বাসী। আমরা সেভাবেই আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনেতাদের কাছে সন্ত্রাসীদের অর্থায়নকারী ও অস্ত্রদাতাদের চিহ্নিত করার কথা বলেছেন। তাহলেই বিশ্বে সন্ত্রাস থাকবে না, কিন্তু সেটি করা হয়নি।’
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হলেও উন্নত বিশ্ব থেকে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা আরও কিছু বছর পাওয়া যাবে বলে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণ হলে অনেক সুবিধা হারানোর কথা রয়েছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের কাছে অঙ্গীকার করেছে, ২০২৯ সাল পর্যন্ত চলমান সুবিধাগুলো আমাদের দেবে। প্রযুক্তির বিষয়ে সুবিধা দেবে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত। আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক দেশের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে ভারসাম্যপূর্ণ নীতি গ্রহণ করেছি। এছাড়া দক্ষ জনগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠায়ও আমরা কাজ করছি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে গুম নিয়ে যে তথ্য দেয়া হয় তা সঠিক নয়। ৬৮ জনের গুমের তথ্য আমরা জানি। এরই মধ্যে ভারতে শাস্তিপ্রাপ্ত গুম হওয়া দুজনকে পাওয়া গেছে। ফলে এখন গুম দুজন কমে ৬৬ জনে এসেছে। আমেরিকাতে বছরে হাজার হাজার মানুষ বন্দুকধারীদের গুলিতে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার হয়। কিন্তু গত তিন বছরে আমাদের দেশে এক্সট্রা জুড়িশিয়াল কিলিং হয়েছে বলে আমার জানা নেই। যারা মারা গিয়েছে তারা অপরাধী।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তজার্তিক স্বীকৃতির জন্য তথ্য ও ডকুমেন্টস আমরা এখনও পাঠাতে পারিনি। আমরা যদি আরও আগে পাঠাতে পারতাম তাহলে স্বীকৃতি পেয়ে যেতাম। এটা নিয়ে কাজ চলছে। কারণ ভালোভাবে তথ্য দিতে না পারলে এটা স্বীকৃত হবে না।’
প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কলামিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. মিল্টন বিশ্বাস। সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম, কলামিস্ট ফোরামের সহ-সভাপতি ড. রাশিদ আসকারী, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত প্রমুখ।