নিজস্ব প্রতিবেদক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির ওপর ‘বিরাট প্রভাব’ ফেলেছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ যুদ্ধ-সংঘাত নয়, শান্তি চায়। ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস, ২০২২’ উপলক্ষে গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
মহামারির বিপদ না কাটতেই ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে বিশ্ব যে নতুন সংকটে পড়েছে, সে কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে সারা বিশ্বের অর্থনীতির ওপর একটা বিরাট প্রভাব পড়েছে। আমরা কোনো সংঘাত চাই না, যুদ্ধ চাই না। আমরা শান্তি চাই। সারাবিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক, সেটাই আমাদের কাম্য।’
জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের ‘কার্যকর’ অংশগ্রহণ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় দেশের অবস্থানকে সুসংহত করেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘের আহŸানে সাড়া দিয়ে প্রয়োজনে আরও শান্তিরক্ষী পাঠাতেও বাংলাদেশ প্রস্তুত বলে তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ‘সামরিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের দেশের ক‚টনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে।’
এর মধ্য দিয়ে বাহিনীর সদস্যরা দেশের জন্য বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন, যা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ‘অবদান’ রেখে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সব শান্তিরক্ষী বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে পেশাদারিত্ব ও সততা বজায় রেখে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন এবং নিজেদের জীবনকে যেমন সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করবেন, দেশের ভাবমূর্তিও যাতে উজ্জ্বল হয়, সেভাবে আপনারা কাজ করবেন, সেটাই আমরা চাই।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের শান্তিরক্ষা বাহিনীসহ সব শান্তিরক্ষা বাহিনী যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, আমি মনে করি, সবাই এই অবদান অবশ্যই মনে রাখবে এবং স্বীকৃতি দেবে।’
শান্তিরক্ষীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনার পরামর্শÑ‘আপনারা বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি শক্তিশালী শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন, বিশ্বে বাংলাদেশের পতাকাকে সমুন্নত রাখবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
সমসাময়িক বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি ‘চ্যালেঞ্জিং’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির দ্রæত প্রসার ও অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় অপশক্তিগুলো নতুন হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ফলে বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোয় শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক ও জটিল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হচ্ছে।’
শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের নারী সদস্যদের অংশগ্রহণে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল নিজেই বিশেষভাবে বলেছেন, তিনি আরও বেশি নারী সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে চান। আমি বলেছি, আমরা সব সময় প্রস্তুত।’
বিভিন্ন মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের অবদান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা অন্যান্য দেশের শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোয় শান্তি ফেরানোর কাজ করছে এবং সেসব দেশের জনগণের ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করছেন।’
প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠান থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শান্তিরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।