নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন শেখ ফজলে শামস পরশ। একই সঙ্গে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন মাইনুল হোসেন খান নিখিল। গতকাল যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসের (সম্মেলন) কাউন্সিল অধিবেশনে তাদের নির্বাচিত করা হয়।
দলের কাউন্সিল অধিবেশনে চেয়ারম্যান পদে শেখ ফজলে শামস পরশের নাম প্রস্তাব করেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলাম। সমর্থন করেন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ। তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। শেখ ফজলে শামস পরশ যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক।
উল্লেখ্য, পঁচাত্তর ট্র্যাজেডিতে মা-বাবাকে হারানো পরশ-তাপসের বেড়ে ওঠা চাচাদের সঙ্গে। পরশ ধানমন্ডি সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার পর দেশে ফিরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছিলেন তিনি। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হলেও রাজনীতির মাঠে দেখা যেত না তাকে। এমনকি ছোট ভাই তাপসের নির্বাচনী প্রচারেও তাকে খুব একটা নামতে দেখা যায়নি। কিন্তু এবার ফুপুর নির্দেশ উপেক্ষা করতে না পেরে বাবার গড়া সংগঠনের দায়িত্ব নিতে হলো তাকে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর যুবকদের সংগঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গড়ে তুলেছিলেন ‘বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ’। তিনি সংগঠনটির দায়িত্ব দেন নিজের ভাগ্নে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ মনিকে।
দুই বছরের মাথায় কংগ্রেসে শেখ মনিই যুবলীগের প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে শেখ মনি নিহত হওয়ার পর ১৯৭৮ সালে যুবলীগের পুনর্জাগরণে সংগঠনটির চেয়ারম্যান হন আমির হোসেন আমু। এরপর তৃতীয় কংগ্রেসে মোস্তফা মহসিন মন্টু, চতুর্থ কংগ্রেসে শেখ ফজলুল হক সেলিম, পঞ্চম কংগ্রেসে জাহাঙ্গীর কবির নানক যুবলীগের চেয়ারম্যান হন। ২০১২ সালে ষষ্ঠ কংগ্রেসে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান ওমর ফারুক।
এদিকে মাইনুল হোসেন খান নিখিল ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি এবার কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা নির্বাচিত হলেন। সাধারণ সম্পাদক পদে সাতজনের নাম প্রস্তাব করা হয়। পরে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে সাধারণ সম্পাদকের নাম চূড়ান্ত করার জন্য ২০ মিনিট সময় দেওয়া হয়। তবে সমঝোতা না হওয়ায় উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতারা শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার মতামত অনুসারে নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের।
ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী মাইনুল হোসেন খান নিখিল দুই যুগের বেশি সময় ধরে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর আগে তিনি ঢাকা উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণ সম্পাদক পদে অন্য যাদের নাম আসে তারা হলেন?মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন, সুব্রত পাল, মনজুর আলম শাহিন, ইকবাল মাহমুদ বাবলু ও বদিউল আলম।
প্রসঙ্গত, গতকাল বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেস (সম্মেলন) উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার বেলা ১১টায় এ কংগ্রেস উদ্বোধন করেন তিনি। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। পরে পায়রা উড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। শেখ হাসিনাকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে এবং উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেন যুবলীগ নেতারা। সম্মেলনের দ্বিতীয় সেশনে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে।
এবার এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুবলীগের সম্মেলন। ক্যাসিনো, মাদক, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিসহ নানা অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সংগঠনটির অনেককে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের অনেকে গ্রেফতার হয়ে কারাগারেও রয়েছেন। সংগঠনটির চেয়ারম্যানকেও এসব অনৈতিক কাজে সমর্থনের জন্য দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সংগঠনে থাকলেও নিষ্ক্রিয় থাকতে বাধ্য হয়েছেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফ, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও শেখ আতিয়ার রহমান দিপুসহ অনেকে। তারা কেউই এবার সম্মেলনে থাকতে পারছেন না।