নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্যাসিনো বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর আত্মগোপনে যাওয়া যুবলীগের দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান আনিসকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আতিয়ার রহমান দীপু তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কাজী আনিসের ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রেসিডিয়াম সদস্যরা একমত হয়েছেন কাজী আনিসকে বহিষ্কার করার জন্য। সেই আলোকে কাজী আনিসকে আমরা বহিষ্কার করেছি। ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত হয়নি।’
কী কারণে আনিসকে বহিষ্কার করা হয়েছে জানতে চাইলে যুবলীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক এবিএম আমজাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কাজী আনিস বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের দফতর সম্পাদক। দুর্নীতির কথা আমরা পত্রপত্রিকায় দেখেছি এবং অর্থনৈতিক তছরুপের কারণে তাকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
যুবলীগের দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দরপত্র থেকে কমিশন আদায় ও সংগঠনের বিভিন্ন কমিটিতে পদ-বাণিজ্য করে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। ১৫ দিন ধরে কাজী আনিস আত্মগোপনে আছেন। তিনি দলীয় কার্যালয়ে যাচ্ছেন না, বাড়িতেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সরদার মোহাম্মদ আলী মিন্টু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যুবলীগের কেন্দ্রীয় অফিসে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ২০০৫ সালে কাজ শুরু করেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের ছেলে আনিস। সাত বছর পর তিনি কর্মচারী থেকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের দফতর সম্পাদক পদে বসেন। কম্পিউটারে নিয়মিত সারা দেশের যুবলীগ কমিটির তালিকা তৈরি করায় সব তথ্য তার মুখস্থ। এ কারণে চেয়ারম্যানের (যুবলীগ প্রধান) ঘনিষ্ঠ হয়ে যান তিনি। ২০১২ সালে যুবলীগের নতুন কমিটি গঠনের সময় আনিসকে উপ-দফতর সম্পাদক করা হয়। দফতর সম্পাদক পদটি খালি থাকায় ছয় মাসের মধ্যে তিনি ওই পদ পেয়ে যান। এখন তিনি একাধিক গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমির মালিক। আনিস যুবলীগের কমিটি বিক্রি করে এবং চাঁদাবাজি ও দরপত্র থেকে কমিশন নিয়ে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণে সম্পদ বানিয়েছেন। ভয়ে এখন তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’
যুবলীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্যদের গতকালের (শুক্রবার) ওই সভায় সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী উপস্থিত হননি। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ। তবে চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তেই ওই বৈঠক হয়েছে বলে দাবি করেন প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। বৈঠক শেষ দীপু সাংবাদিকদের বলেন, ‘সভা ডাকার অনুমতি চেয়ারম্যান দিয়েছেন। চেয়ারম্যানের নির্দেশই ওই সভা হয়েছে। তবে তিনি কেন আসেননি, সে বিষয়টি জানা নেই। হয়তো অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি।’
যুবলীগের আসন্ন সম্মেলনে সভাপতিত্ব কে করবেন জানতে চাইলে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক এবিএম আমজাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এর দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই হবে। আজ সাধারণ সম্পাদক সভাপতিত্ব করেছেন। চেয়ারম্যান একটি বড় পোস্ট। প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তা-ই করব।’
যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে শহিদ সেরনিয়াবাত, শেখ শামসুল আবেদীন, আলতাব হোসেন বাচ্চু, মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, মজিবুর রহমান চৌধুরী, মো. ফারুক হোসেন, মাহবুবুর রহমান হিরন, আবদুস সাত্তার মাসুদ, মো. আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইন, আবুল বাশার, মোহাম্মদ আলী খোকন, অধ্যাপক এবিএম আমজাদ হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার নিখিল গুহ, শাহজাহান ভুইয়া মাখন, ডা. মোখলেছুজ্জামান হিরু, শেখ আতিয়ার রহমান দীপু প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।