যেভাবে এল বিশ্ব নারী দিবস

সানজিদা রহমান: নারী সুন্দর, নারী মহীয়সী, নারী রহস্যময়ী, নারী কল্যাণবহ।বৈচিত্র নারীর অন্যতম প্রধান গুণ। তাই তো কবিগুরু বলেছেন- ‘প্রানকে নারী পূর্ণতা দেয়, এই জন্য নারী মৃত্যুকেও মহীয়ান করতে পারে’।

নারী যে শুধু মায়ের জাত, স্ত্রীর জাত, বোনের জাত, অথবা কন্যার জাত, তা কিন্তু নয়। সে কেবলি একজন নারী, একজন মানুষ। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে নারীকে বিভিন্ন সম্পর্কের নারী হয়ে উঠতে হয়, কিন্তু তাই বলে সে আলাদা কোন জাত হতে পারে না। নিজের ইচ্ছের, পছন্দের, ভালবাসার, সিদ্ধান্তের জাতই হচ্ছে নারী।

নারী যে এখন শুধু যুগ যুগ ধরে চলে আসা তার প্রধান দায়িত্ব ঘর সংসার সামলাচ্ছেন তা কিন্তু নয়। এখন নারী এগিয়ে চলছে পুরুষের সাথে সমান তালে। নারী করছে চাকুরী, নারী চালাচ্ছে বিশ্ব। এমনকি অর্জণ করছে হরেক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

আর তাই প্রতিবছর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকসহ উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশীদারি এবং সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সারাবিশ্বে ৮ মার্চ পালিত হয়ে থাকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস।’

জাতিসংঘ ১৯৭৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন শুরু করে। ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, নারী শ্রমিকের কাজের সময়, ছুটি, সম্মানজনক বেতনের দাবিতে আন্দোলন ছিল দির্ঘদিনের। ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ আমেরিকার বস্ত্রশিল্পের নারী শ্রমিকদের কাজের সময় কমানো ও মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে লড়াই- পশ্চিমা দুনিয়ায় আলোড়ন তোলে। পরবর্তীকালে যুক্ত হয় মেয়েদের ভোটের অধিকারের দাবি। এই সমস্ত দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে ১৯১০ সালে কোপেনহাগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মহিলা সম্মেলনে ৮ মার্চ নারী দিবস পালনের ডাক দেওয়া হয়। ১৭টি দেশের শ্রমিক সংগঠন, সমাজতান্ত্রিক দলগুলোর প্রতিনিধি ছাড়াও ফিনল্যান্ডের পার্লামেন্টে নির্বাচিত প্রথম তিন নারী সদস্য সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ক্লারা জেতকিন নামের এক নারী নেত্রী আন্তর্জাতিকভাবে নারী দিবস পালনের প্রস্তাব করেন। জার্মানির সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নারী কার্যালয়ের নেত্রী ছিলেন ক্লারা। নারী অধিকারের ওপর জোর দেওয়ার জন্য প্রত্যেক দেশে প্রতিবছর অন্তত একটি দিন নারী দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব দেন তিনি। সম্মেলনে উপস্থিত প্রায় ১০০ নারী প্রতিনিধি সর্বসম্মতভাবে তার প্রস্তাব মেনে নেন। ক্লারা জেতকিনের নেতৃত্বে ১৯১১ সালের ১৯ মার্চ প্রথম নারী দিবস পালিত হয়। এ দিনটিকে বেছে নেওয়ারও পেছনে কারণ ছিল। জার্মানকেন্দ্রিক প্রুসিয়ান সম্রাট অনেক অঙ্গীকার দিয়েও সেগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়ে বিপ্লবের মুখে পড়েন। নারীদের ভোটাধিকার দেওয়াও ছিল সেই অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে অন্যতম।

১৮৪৮ সালের ১৯ মার্চ সংঘটিত বিপ্লবের কথা স্মরণ করেই এ তারিখটিকে নারী দিবসের জন্য বেছে নেওয়া হয়। প্রথম নারী দিবস পালনের সপ্তাহ খানেক আগে জার্মানির সাংবাদিকরা নারীদের ভোটাধিকার, কর্মজীবী নারী ও নাগরিক অধিকার, সমাজ ও সরকারে নারীর সমানাধিকার নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন লেখেন। এর ফলাফল আসে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। ১৯ মার্চ শহরগুলোর পাশাপাশি ছোট ছোট গ্রামেও সমাবেশ করেন নারীরা। আর ওই দিন পুরুষরা সন্তানসহ বাড়িতে অবস্থান করেন। ১৯১৩ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের তারিখ পরিবর্তন করে ৮ মার্চ করা হয়।

জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পর চীন, রাশিয়া, ভিয়েতনামসহ প্রায় ১৫টি দেশ এ দিবসকে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালন করছে। নারী-পুরুষ সমান অধিকার আন্দোলনকে বেগবান করতেই ১৯১১ সালের ১৯ মার্চ প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। তবে ১৯১৩ সাল থেকে ৮ মার্চ বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

সারা বছরের মধ্যে এই নারী দিবসের দিনটিতে দুনিয়া জুড়ে মেয়েদের খুব আদরযত্ন করা হয়। পরিবারে তাদের জন্য উপঢৌকন সাজানো হয়, অফিস-কাছারিতে মেয়েদের জানানো হয় বিশেষ সম্মান।’

মেয়েরা তো সব সুযোগই পাচ্ছে। নিজের ইচ্ছামতো সাজছে। বাইরে যাচ্ছে। কাজ করছে। আয় করছে। খাচ্ছেদাচ্ছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে আবার ‘নারী দিবস’ আলাদা করে কেন?

কখনও খেলার ছলে, কখনও গম্ভীর স্বরে এ সব প্রসঙ্গ উঠতেই থাকে। নারী দিবসকে ব্যঙ্গ করা হয়। মেয়েদের চাহিদার বুঝি শেষ নেই, এমনও প্রসঙ্গ ওঠে।

সত্যি কি তবে এখন আর প্রয়োজন নেই নারী দিবস পালন করার! কিন্তু যত দিন এ সব ব্যঙ্গ হতে থাকবে, তত দিন পর্যন্ত কোনও ভাবেই প্রাসঙ্গিকতা হারাতে পারবে না ‘নারী দিবস’। বরং রোজ নতুন নতুন ভাবে প্রয়োজন পড়ে এই দিনটির। কারণ, এমন ব্যঙ্গের ভাঁজেই যে লুকিয়ে থাকে বৈষম্যের বীজ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০