নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়তে পারে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও আমদানি করা কোনো কোনো পণ্যে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে কিছু পণ্য ও সেবার দাম বাড়তে পারে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেটে এসব প্রস্তাব করেন। অর্থমন্ত্রী সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে এক লাখ এক হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদের ১৫তম বাজেট। আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালেরও টানা পঞ্চম বাজেট। এবারের বাজেটের প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে ‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে।’ যেখানে মূল লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখাসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থায় ভারসাম্য রক্ষা।
দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্য ও সেবার
কলম: বলপয়েন্ট কলম উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা তুলে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে কলম উৎপাদনে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসবে। দাম বাড়তে পারে কলমের।
থালা-বাসন: প্লাস্টিকের তৈরি থালা, বাটি ও অন্যান্য পণ্যের ভ্যাট আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে সাত শতাংশ করা হয়েছে। টিফিন বক্স ও পানির বোতলে ভ্যাট আগের মতো থাকবে। অ্যালুমিনিয়ামের থালা-বাসন ও রান্নাঘরের সরঞ্জামের ভ্যাট একই হারে বাড়ানো হয়েছে।
খেজুর: খেজুরের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট ব্যাপকভাবে বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে বাজেটে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, শুকনো খেজুরের ওপর এখন ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক রয়েছে। তবে সাধারণ খেজুরের ওপর নেই। তাই দুই ক্ষেত্রেই ২৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। সঙ্গে থাকবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। অর্থমন্ত্রী আরও বলেছেন, খেজুর কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নয়।
চশমা: চশমার ফ্রেমের ওপর আমদানি শুল্ক এখন পাঁচ শতাংশ। তৈরি চশমার ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ। শুল্ক ফাঁকি রোধে ফ্রেমের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। রোদচশমা বা সানগ্লাসের (প্লাস্টিক ও মেটাল ফ্রেমযুক্ত) ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে আড়াই শতাংশ। নতুন হার সাড়ে সাত শতাংশ।
টিস্যু: কিচেন টাওয়েল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু/পকেট টিস্যু, পেপার টাওয়েল প্রভৃতির ভ্যাট আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে সাত শতাংশ করা হয়েছে।
মোবাইল ফোন: দেশে মোবাইল ফোন সেট উৎপাদনে বিভিন্ন পর্যায়ে ভ্যাটের হার দুই থেকে আড়াই শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে।
গ্যাস সিলিন্ডার: দেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডার উৎপাদনকারীদের জন্য দুঃসংবাদ। সিলিন্ডার তৈরির দুটি কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। এলপিজি সিলিন্ডারের ভ্যাট আড়াই শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে সাত শতাংশ করা হয়েছে।
সিগারেট: সিগারেটের সব কটি মূল্যস্তর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি স্তরে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে সিগারেটের দাম বাড়তে পারে। অবশ্য বিড়ির রাজস্ব বাড়ানো হয়নি। ফলে দাম নাও বাড়তে পারে, কারণ বিড়িতে নতুন করে কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেননি অর্থমন্ত্রী। সিগারেটে কর বাড়িয়ে অর্থমন্ত্রী বাড়তি ছয় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছেন। অর্থমন্ত্রী সিগারেটের নি¤œস্তরে ১০ শলাকার মূল্যস্তর ৪৫ টাকা ও তদূর্ধ্ব এবং সম্পূরক শুল্ক ৫৮ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন। এছাড়া মধ্যম স্তরের দশ শলাকার মূল্যস্তর ৬৭ টাকা ও তদূর্ধ্ব, উচ্চতরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ১১৩ টাকা ও তদূর্ধ্ব, অতি উচ্চস্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ১৫০ টাকা ও তদূর্ধ্ব প্রস্তাব করেন। এই তিন স্তরের সম্পূরক শুল্ক তিনি ৬৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেন।
বিয়ের উপকরণ ও কসমেটিকস আমদানিতে ১৭ শতাংশ শুল্ক: বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত বিদেশি উপকরণসহ কসমেটিকস আমদানিতে রেগুলেটরি ডিউটি (নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক) বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদেশি কসমেটিকস আমদানিতে আগে শুল্ককর ছিল তিন শতাংশ। এখন থেকে তা হবে ২০ শতাংশ। এতে বিদেশি সাবান, অরগানিক সারফেস অ্যাকটিভ উপকরণ, বার কেক ও বিভিন্ন সাবান তৈরি